খুলনা | রবিবার | ১১ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

আশুরাকেন্দ্রিক ভিত্তিহীন আমল

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
০১:১৪ এ.এম | ২২ জুলাই ২০২৩


চলছে মহররম মাস। এই মাসটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস। কিন্তু আমাদের দেশে অনেকে এই মাসটিকে কুফু বা খারাপ হিসেবে ভাবেন। আমাদের দেশে কোন কিছু খারাপ বা কুফল আলোচনা করতে কুফু শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ এই কুফা নগরী ছিল এলমের জগৎখ্যাত কেন্দ্র। অনেকে মহররম মাসটিকেই অশুভ মাস মনে করেন। এমনকি অনেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ এ মাসে করতে চান না। যেমন অনেক মুসলমান এ মাসে বিয়ে-শাদী থেকেও বিরত থাকেন। এগুলো অনৈসলামিক ধারণা ও কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। আমাদের সমাজে মহররম মাস ও আশুরাকে কেন্দ্র করে চালু হয়েছে অসংখ্য ভুল ধারণা, কুসংস্কার ও অনৈসলামিক কর্মকান্ড। রয়েছে আশুরা বিষয়ক নানা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথাবার্তা যা গত সংখ্যায় আলোচনা করেছিলাম। আজ আশুরা ও মহররম কেন্দ্রিক ভিত্তিহীন আমল ও রোযার কথা আলোচনা করব ইনশাল­াহ। 
আশুরার ভিত্তিহীন আমল ও রোযা:
আমাদের দেশে এই ধারণার প্রচলন আছে যে, কারবালার প্রান্তে ইমাম হুসাইনের শাহাদতের কারণে আশুরার আমল ও রোযা রাখা হয়। কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। কারণ হলো, রোযার প্রচলন করেছেন মহানবী সল­াল­াহু আলাইহিস সালাম যা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আর ইমাম হুসাইন রাযিয়াল­াহু আনহু শহিদ হয়েছেন আল­াহর রসূলের ওফাতের অনেক পরে। আল­াহর রসূলের ইন্তেকালের পরে নতুন কোন শরিয়তের আহকাম চালু হতে পারে না। সহীহ হাদিস দ্বারা এটা প্রমাণিত যে আশুরার রোযা পূর্ববর্তী এক বছরের গোনাহের কাফ্ফারা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমাদের দেশে আশুরা ও মহররম মাসকে কেন্দ্র করে অনেকগুলো ভিত্তিহীন আমলের কথা অনেকে বলে থাকেন। যেমন: যে ব্যক্তি মহররমের মাসে রোযা রাখিবে, আল­াহ তায়ালা তাহাকে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে ৩০ দিন রোযা রাখার সমান ছওয়াব দিবেন। অথবা, যে ব্যক্তি আশুরার দিন একটি রোযা রাখিবে সে দশ হাজার ফেরেশতার, দশ হাজার শহিদের ও দশ হাজার হাজীর ছওয়াব পাইবে।  কিংবা, যে ব্যক্তি আশুরার তারিখে রোযা রাখিবে, সে ৬০ বৎসর রোযা নামায করার সমতুল্য ছওয়াব পাইবে। এছাড়াও রয়েছে, যে ব্যক্তি মহররম মাসের প্রথম ১০ দিন রোযা রাখিবে, সে ব্যক্তি যেন ১০ হাজার বৎসর যাবৎ দিনের বেলা রোযা রাখিল এবং রাত্রিবেলা ইবাদতে জাগরিত থাকিল। ... মহররম মাসে ইবাদতকারী ব্যক্তি যেন ক্বদরের রাত্রির ইবাদতের ফজিলত লাভ করিল ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরণের অসংখ্য আমলের কথা বিভিন্ন অনির্ভরযোগ্য লেখনি, বই-পুস্তকে পাওয়া যায়। এগুলোর বেশিরভাগই শিয়া মতবাদের লেখকদের লেখা। এ কথা জানা জরুরি যে,  হাদীসে আশুরার দিনে বা রাত্রে কোনো বিশেষ সালাত আদায়ের বিধান দেওয়া হয় নি। কিন্তু এ প্রসঙ্গে অনেক পুস্তকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি আশুরার দিবসে যোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে ... অথবা আশুরার রাত্রিতে এত রাকআত সালাত অমুক অমুক সূরা এতবার পাঠ করে আদায় করবে ... সে এত পুরস্কার লাভ করবে। সরলপ্রাণ মুসলিমদের মন জয় করার জন্য বিভ্রান্ত এক শ্রেণির লেখক এ সকল কথা বানিয়েছে, যা অনেক সময় সরলপ্রাণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে থাকে। সহিহ হাদিস থেকে এতটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, আশুরার রোযা রাখা সুন্নাত এবং সাহাবায়ে কেরাম এই রোযার এহতেমাম করতেন। তাই আসুন, আমরা সব ধরণের কুসংস্কার ও গর্হিত রসম-রেওয়াজ থেকে বেঁচে সুন্নাত-মোতাবেক আমল করি।   
(লেখক: মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)

্রিন্ট