খুলনা | মঙ্গলবার | ০৩ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

সর্বজনীন শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা

হাওলাদার মোস্তাক আহমেদ (তুহিন) |
০১:১৩ এ.এম | ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩


“শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড’’। মেরুদন্ডহীন প্রাণি যেমন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না, তেমনি অশিক্ষিত জাতি বিশ্বদরবারে মর্যাদার আসনে ঠাঁই করে নিতে পারে না ‘মানুষকে সভ্য করে তোলার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে বিদ্যালয়। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখব শিক্ষা জাতির মেরুদন্ডের চেয়েও বেশি কিছু। কারণ মেরুদন্ডহীন প্রাণি সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারলেও চলাচল করতে পারে। 
কিন্তু বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে, তথ্য-প্রযুক্তির এই দিনে বিশ্বে কোনো অশিক্ষিত জাতির পক্ষে টিকে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি সরকারই চাইছে কত কম সময়ের মধ্যে দেশের মানুষকে সত্যিকারার্থে সুশিক্ষিত করে তোলা যায়। দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, তথা মর্যাদার সঙ্গে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার বিকল্প নেই। বিপুল জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ নিরক্ষর রেখে দেশের উন্নয়ন কোনো কালেই সম্ভব নয়। তাই সর্বস্তরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়া অপরিহার্য। 
সর্বজনীন শিক্ষা কি?
আমাদের দেশে সর্বজনীন শিক্ষা বলতে মৌলিক শিক্ষাকে বোঝায়, যা প্রধানত প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে দেয়া হয়। প্রাথমিক শিক্ষা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম স্তর। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য দু’টি : 
১. মানসম্মত মৌলিক বা বুনিয়াদি শিক্ষা নিশ্চিতকরণ,
২. শিক্ষাব্যবস্থার পরবর্তী স্তরে প্রবেশের জন্য যোগ্যতা অর্জন।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য ১৯৭২ সালে গৃহীত সংবিধানে দেশে সর্বজনীন শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হল দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও মানবিক বিষয়ে শিশুর সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও উন্নয়ন সাধন।
সে লক্ষে বাংলাদেশ সরকার মানবসম্পদ উন্নয়ন ‘ প্রাথমিক শিক্ষাকে’ মূল উপকরণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। করেছে ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন’।
প্রাথমিক শিক্ষা : প্রাথমিক শিক্ষা হলো সে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর বা নিম্নতম সোপান। জাতিকে ক্ষুদ্রতা, সংকীর্ণতা, অশিক্ষা, পশ্চাৎপদতা, দারিদ্র্য ও অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির হাত থেকে মুক্ত করতে হলে চাই সবার জন্য শিক্ষা। শিক্ষাই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের নিশ্চয়তা বিধান করতে শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক আবুল ফজল বলেছেন, ’শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতির শিক্ষিত জনশক্তি তৈরির কারখানা আর রাষ্ট্র ও সমাজ দেহের সব চাহিদার সরাহ কেন্দ্র। 
তাই সমগ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর সৃজনীশক্তির বিকাশ ঘটে। তাদের দৈহিক, মানসিক, নৈতিক চরিত্র বিকশিত হয় এবং ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন ঘটে। সুতরাং, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। 
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার নিরক্ষরতার অন্ধকার থেকে জাতিকে মুক্ত করতে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শিক্ষাপদ্ধতিতে আনা হয়েছে অবকাঠামোগত পরিবর্তন। স্যাটেলাইট স্কুল ও কমিউনিটি স্কুল প্রতিষ্ঠার সমর্থন দিয়ে শিশু ভর্তির সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রমের উন্নয়ন সাধন করে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা, পরিবেশ, স্যানিটেশন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাক্রমকে জীবনভিত্তিক করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা ভালোভাবে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ প্রদান, বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক প্রদান, শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি প্রবর্তন, বৃত্তি, উপবৃত্তি ইত্যাদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষিত জাতি গড়ার ক্ষেত্রে সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।
লেখক : সহকারী শিক্ষক, গাইকুড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খুলনা সদর, খুলনা।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ