খুলনা | সোমবার | ০২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৭ আশ্বিন ১৪৩০

কয়রার কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসী

কয়রা প্রতিনিধি |
০৩:৪৬ পি.এম | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩


সকালে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় গিয়েই দেখি স্লুুইট গেটের পাশে বেঁড়িবাধে হটাৎ রাতে ধসে গেছে। কি ভাবে ভয়াবহ ভাঙ্গন লাগলো কিছু বুঝতে পারলাম না। একথাগুলো বলেন, উপজেলার সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা গ্রামের আঃ জলিল। দেখেই তিনি গ্রামের লোকদের হাক চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকেন, কে কোথায় আছিস ঝুড়ি কোদাল নিয়ে ছুটে আয়। বাঁধ রক্ষা না করতে পারলে চলতি রোপা আমন মৌসুমের ধানসহ শত শত বিঘা জমির মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে যাবে।  

জানা গেছে, আজ সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে জেলার কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের ২নং কয়রা গ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধের ১৩-১৪/২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙনরোধে পাউবোর দেওয়া পাঁচ শতাধিক জিও ব্যাগ ও বড় বড় মাটির খন্ড নিয়ে বেড়িবাঁধের ২০০ মিটার অংশ নদে ধসে পড়ে। ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বাঁধসংলগ্ন ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ গ্রামসহ কয়রা উপজেলা সদরের প্রায় ৮ হাজার মানুষ। দ্রুত ভাঙনরোধে অবিলম্বে পাউবোর পক্ষ থেকে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে প্রায় দুই হাজার একর আমনের খেতসহ অসংখ্য মাছের ঘের নদের লোনাপানিতে ডুবে যাওয়ায় আশঙ্কা করছেন স্থানীয় অধিবাসীরা।

সোমবার সকালে বেড়িবাঁধ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাঁধের যে স্থান ভেঙে গেছে, এর দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে বালু বেরিয়ে যাচ্ছে। ওই বালু ঢেউ লেগে ধুয়ে যাচ্ছে। ধসে যাওয়া স্থানে সংস্কারের চেষ্টা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কেউ পাশ থেকে মাটি কেটে ধসে যাওয়া স্থানে ফেলছেন; আবার কেউ বাঁধের ঢাল থেকে জিও ব্যাগ তুলে ধসে যাওয়া বাঁধের স্থানে দিচ্ছেন। এলাকাবাসী প্রানপন চেষ্টা করছে বাঁধ রক্ষার কাজে।

২ নম্বর কয়রা গ্রামের বাসিন্দা আবু মুসা ও আসলাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাত্র দুই বছর আগে এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। অথচ এরই মধ্যে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বেড়িবাঁধ নির্মাণের সময় ওপরে এবং বাঁধের দুই পাশে মাটি দেওয়া হলেও ভেতরে বালু দেওয়া হয়। এ কারণে বাঁধ দুর্বল হয়ে ধসে গেছে।

কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, এর আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাঁধের ওই স্থান ভেঙে যায় । সে সময় পাউবো ওই বাঁধ মেরামতের উদ্যোগ নেয়। তবে সঠিক তদারকি না থাকায় কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অপরিকল্পিতভাবে বাঁধটি মেরামত করে। এ কারণে দুই বছর না যেতেই বাঁধটি ভাঙনের শঙ্কার মুখে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সোমবার  সকাল থেকে ভাঙনকবলিত স্থানে নদের পানিতে ঘূর্ণমান প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। এতে বাঁধের নিচের অংশের মাটি দ্রুত সরে যাচ্ছে। বাঁধ যাতে না ভাঙে, সে জন্য নদের তীরে পাকা ব্লক দেওয়া দরকার।

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব৷ এস এম শফিকুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে বিষয়টি পাউবোর কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় প্রাথমিকভাবে পানি ঢোকা ঠেকাতে পারলেও ভাঙনরোধে দ্রুতত পাউবোকে পদক্ষেপ নিতে হবে; অন্যথায় নদের তীরবর্তী জনপদের বিস্তীর্ণ এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা আছে।’

খুলনা পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মুহম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘কয়রার এসব বেড়িবাঁধ এত দিন সাতক্ষীরা জেলার আওতাধীন ছিল। দুই বছর আগে ২ নম্বর কয়রা এলাকার বেড়িবাঁধটি জাইকার অর্থায়নে সাতক্ষীরা পাউবো নির্মাণ কাজ করে । খুলনা পাউবো সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছে। তবে প্রশাসনিক জটিলতা এখনো কাটেনি। তার পরেও আজ সোমবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হবে।
 

প্রিন্ট

আরও সংবাদ