খুলনা | সোমবার | ১২ মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

খুলনায় রোড মার্চের সমাবেশে মির্জা আব্বাস

হাত জোড় করে ক্ষমা চান, দেশের  মানুষ ছাড় দিলেও দিতে পারে 

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৪৬ এ.এম | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩


স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মীর্জা আব্বাস দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের পদত্যাগ ছাড়া উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন,  আগামী সংসদ নির্বাচনে তত্ত¡াবধায়ক সরকারে প্রশ্নে কোন ছাড় দেয়া হবে না। নির্বাচন করতে হলে সঠিক নিরাপদ ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারে অধিনে নির্বাচন করতে হবে। জনগণ ভোটাধিকার ফেরত চায়। এই দেশের মানুষ বর্তমান সরকারের অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। আর না। এবার জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার তারা গণতন্ত্র মুক্ত করে ঘরে ফিরবে।
মঙ্গলবার খুলনায় রোড মার্চের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে রোড মার্চ শেষে খুলনায় বিএনপি’র সমাবেশ শুরু হয় রাত ৮টায়। নগরীর শিববাড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মির্জা আব্বাস আ’লীগ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, অনেক করেছেন, এখনও সময় আছে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করুন এবং হাত জোড় করে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চান, সে ক্ষেত্রে মানুষ ছাড় দিলেও দিতে পারে। তবে যারা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে তাদের বিচার এই বাংলার মাটিতেই হবে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ের আমেরিকায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকার বিষয় বলেন, এ সম্পদ এদেশের মানুষের সম্পদ। সে সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে আ’লীগ সরকার আমলে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ১ লক্ষ ৯ হাজার কোটি বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮ হাজার কোটি চুরি হয়েছে। ব্যাংকে সোনা রাখলে তামা হয়ে যাচ্ছে। ১৮ জন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নেওয়া ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আমেরিকায় ঘুষ দিতে যেয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসার কথা উলে­খ করে বলেন, শুনেছিলাম আগামী ৫ তারিখ প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরবেন। কিন্তু এমন কি হলো তার আগে ফিরে আসছেন। এ খবর দেশের মানুষকে কিছু জানান। কি কারণে নির্ধারিত সফরের আগে ফিরছেন তা বোধগম্য নয়।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, খুলনার পাটকলগুলো আ’লীগ সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকরা এখন খাবে সে খবর নেই। খবর হলো, কি করে ছলচাতুরী করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় তার কলা কৌশল নিয়ে ব্যস্ত আ’লীগ।
বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের মহাসচিব ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। সেটা আজ শেষ হচ্ছে। কিন্তু সেটি আপনরা তোয়াক্কা করেননি। তাই কি ভয়াবহ হতে পারে তা আপনারা অচিরেই দেখতে পাবেন। দেশের বিচার বিভাগে এখন খুন, জখম আর অপরাধের বিচার-আচার নেই। শুধু বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের বিচারের কাজ চলছে। প্রতিদিন আদালত প্রাঙ্গনে বিএনপি নেতাদের হাজিরা দিতে হচ্ছে। 
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের শত্র“তা নেই। প্রশাসনে যারা আওয়ামী তোষণে নিয়োজিত তাদের বিরুদ্ধে আমাদের শত্র“তা রয়েছে। খুলনার রোড মার্চে আসার পথে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও খুলনার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে কতিপয় পুলিশ উল্টো বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে। একজন ভিক্ষুকের ঘাম ঝরানো পয়সায় আপনাদের বেতন হয়। জনগণের টাকায় পোষাক পরে এভাবে হামলা-মামলা করতে পারেন না।
তিনি বলেন, এ সরকারের পতন হবেই। তবে এ সরকার আরও  মামলা, হামলা আর সাজা দিতে পারে। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা নেই। যে কারণে তার সত্য লিখতে পারে না। আজকের রোড মার্চে রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তারা রোড মার্চের বহরকে দাঁড়িয়ে সমর্থন দিচ্ছে। আগামীতে আরও রোড মার্চসহ কঠিন কর্মসূচি আসবে। এজন্য নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহŸান জানান।
দলের মহানগর আহবায়ক এস এম শফিকুল আলম মনা সমাবেশে সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শ্যাংসন মানি না। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আমরাও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চাই। কিন্তু এই কাটা-ছেড়া সংবিধান অনুযায়ী নয়। আমারা বেগম খালেদা জিয়ার রেখে আসা সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চাই। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের জেতনা আর লুটপাট ও চোরের চেতনা এক হয়ে গেলে তখন মানুষ আর ঘরে বসে থাকতে পারে না। মানুষ এক রাজপথে নেমে আসে। 
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আমাদের চেয়েও প্রধানমন্ত্রী আরও ভালো জানেন। বেগম খালেদা জিয়ার কোনো খারাপ সংবাদ হলে শেখ হাসিনা কি বাঁচতে পারবেন? এই আওয়াজ শেখ হাসিনার কান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দেশের ব্যাংকে যে টাকা আছে তার চেয়ে বেশি শেখ পরিবারের আত্মীয়দের কাছে আছে। তাহলে দেশ কিভাবে চলবে।
তিনি দেশের ১০/১৫ জন ব্যবসায়ীকে ভূমিদস্যু উলে­খ করে বলেন, তারা এ সরকারের পতন হলে দেশে থাকতে পারবে না এমন কথা বলেছে। আমারা তাদের বাঁচানোর লড়াই করছি না। আমারা ১৮ কোটি মানুষের বাঁচার লড়াই করছি। এ লড়াই দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বাঁচানোর লড়াই।
সমাবেশের বিশেষ অতিথি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, আগামী মাসে হাসিনা নামে কোনো সরকার বাংলাদেশে থাকতে পারবে না। অবস্থ্ াভালো নয়। যতো তাড়াতাড়ি পারেন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। বেশি দেরি করবেন না। দেরি করলে আপনাদের অসুবিধা হবে। যতো দ্রুত বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করবেন, ততো আপনারা নিরাপদে থাকবেন। তিনি বলেন, রোড মার্চের সাধারণ মানুষের উচ্ছ¡াস দেখে মনে হয়েছে দেশে আর শেখ হাসিনার সরকার নেই। নেতা-কর্মীদের এক সঙ্গে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, শিগগিরই আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ আপনাদের উপহার দেবো। 
অপর বিশেষ অতিথি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল­াহ বুলু বলেন, খালেদা জিয়া আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশে প্রথম মহিরা মুক্তিযোদ্ধা খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলের সম্পত্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করতে পারে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্পদ যদি বৈধ হয়, তাহলে বাজেয়াপ্ত করবে কেন। নিশ্চয়ই সেটি অবৈধ সম্পদ। আর সেটা এদেশের মানুষের সম্পদ।
সমাবেশ আরও বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন সমাবেশে ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক এড. আসাদুজ্জামান আসাদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. ওবায়দুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, উপ-কোষাধ্যক্ষ মাহমুদ আলম খান বাবু, সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ ত্রান ও পুনর্বাসন সম্পাদক নেওয়াজ হালিমা আরলী, সহ পরিবার ও কল্যাণ সম্পাদক জাহানারা বেগম, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী আলাউদ্দিন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদলে ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, অমলেন্দু দাস অপু, নূর ইসরাম নয়ন, বাগেরহাট জেলা বিএনপি’র আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আকরাম হোসেন তালিম, মোজাফ্ফর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, নড়াইল জেরা বিএনপি’র বিশ^াস জাহাঙ্গীর হোসেন, মৎস্যদলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, ঝিনাইদহের ইয়াছিন আলী, খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান, সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক আবু হোসেন বাবু, মহিলাদলের সৈয়দা রেহেনা ঈসা প্রমুখ।
গতকাল সকাল ৯টায় ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড থেকে রোর্ড মার্চ শুরু হয়ে এবং তার রাত ৮টা নাগাদ খুলনায় এসে পৌঁছায়। দীর্ঘ এই সময় রাস্তার দু’ধারে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রোড মার্চকে স্বাগত জানায়। এ সময় ১০টি পথ সভায় নেতৃবৃন্দ বক্তৃতা করেন।
অপর দিকে দুপুর থেকে জাসাস খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে চলে গণসঙ্গীত। দেশের অন্যতম কণ্ঠ শিল্পী ও জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা নাসিরের একরে পর এক সঙ্গীত ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করে জনতা উপভোগ করে। এসময় কেন্দ্রীয়, স্থানীয়ও এবং বাংলাদেশ বেতারের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। 

্রিন্ট

আরও সংবদ