খুলনা | শুক্রবার | ০৯ মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২

সেপ্টেম্বরে মানবাধিকার প্রতিবেদনে এমএসএফ

সেপ্টেম্বর মাসে ১৫ সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

খবর প্রতিবেদন |
০১:১৭ এ.এম | ০১ অক্টোবর ২০২৩


মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, সেপ্টেম্বর মাসেও ১৫ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
এমএসএফের দেওয়া সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। শনিবার প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমে পাঠায় এমএসএফ। সেখানে বলা হয়, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের নানাভাবে হুমকি, নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন—যা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করার শামিল। সাংবাদিকদের শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি ও হুমকি এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করছে।
দেশের ১৮টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন  তৈরি করা হয়।
মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এমএসএফ বলছে, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল আগের মতোই উদ্বেগজনক। দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বন্দুকযুদ্ধ, তাদের পরিচয়ে অপহরণ, নির্যাতন এবং অপতৎপরতার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার, গায়েবি মামলা ও পুলিশী বলপ্রয়োগের ঘটনা নিদারুণভাবে অব্যাহত রয়েছে। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। গণপিটুনির মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রিয়তার তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রত্যেকটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তসহ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে এমএসএফ।
এমএসএফের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি ছিল পুরোপুরি নিবর্তনমূলক আইন। সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে অপরাধ দমনের কথা বলা হলেও বাস্তবে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই এটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সরকার সব পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা ও দাবি উপেক্ষা করে নিজেদের মতো করে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম পরিবর্তন করেছে।
এমএসএফ বলেছে, কিছু ধারার সংশোধনী এনে জামিনযোগ্য ও কিছু সাজার মেয়াদ কমিয়ে সেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেরই আদলে সংসদে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ পাস করেছে। অনেক ধারায় শাস্তির মেয়াদ ও মাত্রা কমানো হলেও বিনা পরোয়ানায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার, তাঁর বাড়ি বা স্থাপনায় তল­াশি চালানো সেগুলো অবিকল একই রকম রেখে দেওয়া হয়েছে। একজন পুলিশ কর্মকর্তাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুলিশকে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সুরক্ষার নামে যদি নাগরিক হয়রানি বৃদ্ধি পায় এবং সংবাদ মাধ্যমের অধিকার ও কর্মপরিবেশ খর্ব হয়, তাহলে সাইবার নিরাপত্তা আইন নেতিবাচক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে। মোটকথা এই আইন দ্বারা নাগরিকদের বাক্স্বাধীনতা খর্ব করার উদ্দেশ্য পুরোপুরিই বহাল রাখা হয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত মাসে গ্রেফতার হয়েছেন এক সাংবাদিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন প্রথম আলোর সাংবাদিক মোশাররফ শাহসহ ১২ জন। হয়রানির শিকার হয়েছেন দু’জন। একজন সাংবাদিককে নিখোঁজের পর উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম (দণ্ডবিধি ও অফিশিয়াল সিক্রেটস এ্যাক্টের মামলায় পাসপোর্ট জিম্মা রাখা হয়) পাসপোর্ট ফেরত না পাওয়ায় সুইডেনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের (জিআইজিএন) সম্মেলনে যোগ দিতে পারছেন না।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর ছাত্রদল নেতা কাইফি শিকদার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে কটূক্তি করে পোস্ট দেন। এ ঘটনায় মামলার পর পুলিশ ছাত্রদল নেতা কাইফির বাবা আবুল কালাম শিকদারকে গ্রেফতার করে। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশের সহায়তায় রাজধানী থেকে কাইফি শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। কাইফি পোস্ট দিয়েছেন কিন্তু গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর বাবাকে।
রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত, মামলা : এমএসএফের প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় সময়ই পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ঘোষণা থাকছে। ফলে এসব রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে হামলা-মামলা ও সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। সহিংসতা, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা ও গায়েবি মামলায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিরোধী দলীয় ব্যক্তিদের আসামি করা হচ্ছে। এর মূল উদ্দেশ্য, গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও সংগঠকদের ভীতসন্ত্রস্ত ও আতঙ্কের মধ্যে রাখা, যাতে তাঁরা সভা-সমাবেশ করতে না পারেন। কোনো সহিংসতা ঘটলে বা না ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করছে এবং অজ্ঞাতনামা অসংখ্য ব্যক্তিকে আসামি করা হচ্ছে। এতে সুষ্ঠু রাজনীতি করার অধিকার থেকে জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে এবং ক্রমাগত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা কমছে। ১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার অভিযোগে ২১টি হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা ৩টি মামলা করেছেন। রাজনৈতিক মামলা ২১টির মধ্যে বিএনপি’র বিরুদ্ধে ১৬টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা ও সভা-সমাবেশে বাধার ৩৪টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৪২৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৪২৫ জন আহত ও ৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন গুলিবিদ্ধ হন। বিএনপি’র ওপর হামলায় একজন আওয়ামী লীগের কর্মী নিহত ও ক্ষমতাসীন দলের কোন্দলে দু’জন আওয়ামী লীগের কর্মী নিহত হন।
সীমান্তে হত্যা : সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না, এমএসএফের প্রতিবেদনে উলে­খ করা হয়েছে। 
প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত মাসে সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে চারজন নিহত ও ভারতীয় নাগরিকদের গণপিটুনিতে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ২৭ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার ঠাকুরপুর সীমান্ত এলাকার ভারতীয় অংশে রবিউল ইসলাম (৪২) নামের এক বাংলাদেশি গরু ব্যবসায়ী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
এমএসএফ মনে করে, সরকারের পক্ষ থেকে সীমান্তে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাগুলো বন্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রকার তৎপরতা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। কথা ছিল প্রয়োজনে সীমান্তরক্ষী বাহিনী রাবার বুলেট ব্যবহার করবে। এখানে তার ব্যত্যয় ঘটেছে। সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য হতে পারে না।

্রিন্ট

আরও সংবদ