খুলনা | মঙ্গলবার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

শ্যামনগরে উপকূল রক্ষা বাঁধ ধ্বংস করছে বাক্সকল : অপসারণে পাউবো’র অনীহা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা |
০১:০২ এ.এম | ০২ অক্টোবর ২০২৩


সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি ঘেরে লবণ পানি তোলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ভেড়িবাঁধে ছিদ্র করে বসানো অবৈধ নাইন্টি পাইপ ও বাক্সগুলো অপসারণ না করায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে উপকূল রক্ষা বাঁধ। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার কৈখালী ইউনিয়নের পরানপুর ও কাঠামারি এলাকার মাঝখানে ভেড়িবাঁধে স্থাপিত এমনই একটি বাক্সকল ভেঙে নদীর পানি প্রবেশ করেছে লোকালয়ে। 
স্থানীয়রা জানান, নদীর লবণ পানি ব্যবহার করে চিংড়ি চাষের জন্য ঘের মালিকরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়িবাঁধে যত্রতত্র ছিদ্র করে পাইপ ও বাক্স কল বসিয়ে বাঁধ দুর্বল করে দিয়েছে। অনেকে অবার ভেড়িবাঁধ থেকে দূরে অবস্থিত ঘের মালিকদের কাছে নদীর পানি বিক্রির জন্য অবৈধভাবে ভেড়িবাঁধ ছিদ্র করে নাইন্টি পাইপ ও বাক্স বসিয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তারা ব্যবসা করার জন্য অবৈধভাবে এসব বাক্স স্থাপন করেন। কৈখালী ইউনিয়ন জুড়ে অন্তত ২০টি স্থানে বাক্সকল বসিয়ে পানি উত্তোলন করছেন ঘের মালিক ও পানি ব্যবসায়িরা। এতে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে পাউবো’র ভেড়িবাঁধ।
তারা বলেন, শনিবার দুপুরে হঠাৎ করে কৈখালী এলাকার নূর ইসলামের মাছের ঘেরের বাক্সকল ভেঙে ১৫ ফুট এলাকাজুড়ে ভেড়িবাঁধের তলার মাটি নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে করে পাউবোর ভেড়িবাঁধের ১৫ ফুট এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দেয়। বাক্সকলের ছিদ্র দিয়ে হঠাৎ পানি প্রবেশ করার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কৈখালী ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বালুর বস্তা দিয়ে সাময়িক পানি আটকানো সম্ভব হলেও যে কোন মুহূর্তে ওই পয়েন্টে বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক বিরাজ করছে এলাকা জুড়ে। 
স্থানীয় আব্দুর রহিম ও কালাম গাজী বলেন, বাক্সকলের কারণে কিছু কিছু এলাকায় সিএ্যান্ডবির রাস্তাও দেবে গেছে। অন্যদিকে কিছু স্থানে পাউবো’র ভেড়িবাঁধের দু’পাশ ভাঙনের কবলে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকার এসব ভেড়িবাঁধ রক্ষার্থে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের অবহেলায় তা পানিতে যাচ্ছে। ফলে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে উপকূলের জনজীবন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভেড়িবাঁধে বসানো বাক্সকলের মাধ্যমে নদীর পানি পাশ্ববর্তী ঘেরে বিক্রি করে সংশ্লিষ্টদের বার্ষিক আয় প্রায় কোটি টাকার উপরে। এই টাকার একটি ভাগ পেয়ে থাকেন পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা। এজন্য ভেড়িবাঁধ রক্ষার জন্য বক্সকল অপসারণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ অবৈধ এসব বাক্সকল অপসারণে কোন পদক্ষেপ বা দোষী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এক্ষেত্রে তারা একরকম নিরব ভূমিকার পালন করছে। ফলে ভেড়িবাঁধ রক্ষায় পাউবো কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনভাবের সৃষ্টি হয়েছে।
কৈখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, শনিবার কৈখালী ইউনিয়নের পরানপুর ও কাঠামারি এলাকার মাঝখানে ভেড়িবাঁধে বসানো বক্সকল ভেঙে নদীর পানিতে লোকালয় প্লাবিত হওয়ার খবর জানতে পেরে তাৎক্ষণিক তিনি সেখানে যান। পরে লোকজন নিয়ে ওই ভাঙন পয়েন্ট মেরামতের চেষ্টা করেন। আপাততঃ ওই স্থান দিয়ে পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তবে এ রকম আরো কয়েকটি বাক্সকল আছে যা ভেড়িবাঁধের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোন মুহূর্ত্বে এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাক্সকল ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এগুলো অপসারণ না করলে আগামীতে আরও বড় ঝুঁকির মধ্যে থাকবে ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ। ভেড়িবাঁধ ছিদ্র করে কল বসানো যাবে না উলে­খ করে তিনি দ্রুত এসব অবৈধ বাক্সকল অপসারণে পাউবো কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিও) জাকির হোসেন বলেন, আমরা দ্রুত ভাঙন কবলিত এলাকা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে বাক্সকলগুলো অপসারণের বিষয়ে পাউবো’র দায় এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, বাক্স অপসারণ উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় প্রশাসনের উপর নির্ভর করে। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দিতে পারি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন পয়েন্টটি স্থায়ী ভাবে সংস্কার করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ