খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হচ্ছে আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৫ এ.এম | ২০ অক্টোবর ২০২৩


ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে আজ শুক্রবার মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫ দিনব্যাপী সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের। 
অশুভ শক্তির নাশ এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে দেবী দুর্গাকে দুর্গতি নাশিনী বলা হয়। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন তাকে মহিষসুর মোদিনী বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার খুলনা মহানগরীতে ১৩৫টি, জেলার ৯টি উপজেলা ও ২টি পৌরসভায় ৯০৯টি মন্ডপে পূজা হচ্ছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। 
দুর্গাদেবী এবার ঘোটকে আগমন করবেন এবং ঘোটকে গমন করবেন। এই পাঁচ দিন প্রতিটি মন্দিরে পূজা-অর্চনা, সন্ধ্যা আরতি, ধর্মীয় আলোচনা ও প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দির প্রাঙ্গণে দর্শকদের ভীড় পরিলক্ষিত হবে। ইতোমধ্যেই প্রতিমা তৈরির ও মন্দিরের সাজ-সজ্জার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। 
পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মাদেবের তপস্যা করে বরপ্রাপ্ত হন যে, তাকে কেউই যুদ্ধে তাকে পরাজিত করতে পারবে না, তবে নারীর হাতে তার মৃত্যু হবে। ব্রহ্মার বরে বলিয়ান হয়ে মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ আক্রমণ করেন। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছ থেকে স্বর্গরাজ্য দখল করেন। মহিষাসুরের অত্যাচারে অবশেষে সকল দেবতা বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন। বিষ্ণু ও শিব দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কথা শুনে ক্রোধান্বিত হন। তাদের তেজদীপ্ত ক্রোধে আবির্ভূত হলেন দশভূজা শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী। তেজময়ী দেবীকে দেবতারা একে একে তাদের অস্ত্র দিয়ে সাজিয়ে তুললেন রণরঙ্গিনী মূর্তিতে। মহাদেব দিলেন তাঁর ত্রিশূল, বিষ্ণু দিলেন সুদর্শন চক্র, দেবরাজ ইন্দ্র দিলেন বজ্র, যমরাজ দিলেন কালদণ্ড, পবনদেব দিলেন ধনুক ও বানপূর্ণ তৃণ, বরুণদেব দিলেন শঙ্খ, হিমালয় পর্বত প্রদান করলেন বাহনরূপে একটি সিংহ। দেবীদুর্গা দেবতাদের অস্ত্র  ও অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে রণভূমিতে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অসুর বাহিনীকে দেবী দুর্গা পরাজিত করলেন। অবশেষে মহিষাসুর নিজে আসলেন যুদ্ধে। যুদ্ধে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে ত্রিশূল দিয়ে বিদ্ধ করলেন। মৃত্যুমুখে মহিষাসুর মা দুর্গা দেবীর কাছে বরপ্রাপ্ত হন যে, শ্রীশ্রী দুর্গাদেবীর সঙ্গে তার যেন পূজা হয়। শ্রীশ্রী দুর্গা দেবী মহিষাসুরকে বর দেন, পূজা দেবতাদের জন্য তোর মত অসুদের জন্য নয়, তবে আমার সঙ্গে মত্তবাসী তোর পূজা করবে তবে দেবতা জ্ঞানে নয় অসুর জ্ঞানে। বসন্তকালে পঞ্চমী তিথিতে বাসন্তি পূজা নামে এ পূজা অনুষ্ঠিত হতো। 
এদিকে বাল্মিকী মুনির রামায়ন থেকে জানা যায়, অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র শ্রীরামচন্দ্র পিতৃসত্য পালনে স্ত্রী সীতা ও ভাই লক্ষনসহ  ১৪ বছর বনে বাস করেন। এ সময় লঙ্কার রাজা বারণ সীতাকে হরণ করেন। সীতা উদ্ধারের জন্য রাবণকে বধ করার সময় শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে উত্তরায়নে অকাল বোধন করে শ্রীশ্রী দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। 
বৈদিক মতে জানা যায়, উপমহাদেশে দুর্গাপূজা শুরু হয় ষোড়শ শতাব্দিতে রাজশাহী জেলার তাহিরপুরে। কুল­কভট্টের পুত্র রাজা কংস নারায়ণ মোঘল সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে তৎকালীন আট লক্ষ টাকা ব্যয় করে শরৎকালে প্রথম সাড়ম্বরে দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎ নারায়ণ নয় লক্ষ টাকা ব্যয় করে বসন্তকালে দুর্গাপূজা করেন। নদীয়ার বিখ্যাত রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র ও রাজা নবকৃষ্ণ দেব দুর্গাপূজা করেন। বৃটিশ শাসনামলে কলকাতায় ধর্নাঢ্য ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুর্গাপূজার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০৪ সালে বেলুর মঠে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রবর্তন করেন। এ ভাবেই উপমহাদেশে সার্বজনীন দুর্গাপূজার প্রচলন লাভ করেছে। 
এদিকে, পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে দেশজুড়ে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সারাদেশে এখন বইছে উৎসবের আমেজ। ঢাক-ঢোল কাঁসা এবং শঙ্খের আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ডপ। রামকৃষ্ণ মিশনের পূজার নিঘন্টে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। এদিন সকাল থেকে চন্ডিপাঠে মুখরিত থাকবে সকল মন্ডপ এলাকা।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার  মহাসপ্তমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে। মহাষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। সন্ধিপূজা শুরু হবে রাত ৮টা ৬ মিনিটে। সোমবার  সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে নবমী পূজা। পরদিন মঙ্গলবার দশমী পুজা শুরু সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন হবে সকাল ৯টা ৪৯ মিনিটের মধ্যে। সন্ধ্যায় আরাত্রিকের পর প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপি এ উৎসবের।  
শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠান মালার আয়োজন করেছে। মহানগরী ছাড়াও সকল উপজেলায় ব্যাপক উৎসব মুখর পরিবেশে এ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। পূজার সময় সবাই নতুন জামা কাপড় পরিধান করে মাকে দর্শন করেন। বিজয় দশমীর দিনে বধূরা সিঁদুর উৎসবের আয়োজন করেন। দেবী দুর্গাকে সিঁদুর ও মিষ্টি মুখ করে বিদায় জানাবে। দুর্গাপূজা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছেন।

্রিন্ট

আরও সংবদ