খুলনা | শুক্রবার | ০৬ জুন ২০২৫ | ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বেনাপোল বন্দরে অনিরাপদ রাসায়নিক বর্জ্য

|
১২:০১ এ.এম | ১০ নভেম্বর ২০২৩


এ কথা হয়তো কারোরই আজ অজানা নয় যে রাসায়নিক পদার্থের ক্ষমতা কতটা ব্যাপক। এই রাসায়নিক পদার্থ দিয়েই তৈরি করা হয়েছিল পৃথিবী ধ্বংস করে দেওয়ার মতো পারমাণবিক অস্ত্র। এর একটি নমুনা আমরা জানতে পারি ইতিহাস থেকে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে ছাই হয়ে যায় শহর দু’টি।
বোমার আঘাতে মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ। কিন্তু শুধু বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়েও পরবর্তী সপ্তাহ, মাস, বছর ধরে মারা গেছে আরও বহু মানুষ। যাঁরা বেঁচে ছিলেন তাঁরা শুধু মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়েই জীবন পার করেননি, শারীরিক কষ্টও করেছেন।
তাদের মধ্যে লিউকেমিয়া ও অন্যান্য রোগও ধীরে ধীরে বেড়ে গিয়েছিল। শারীরিক সমস্যার প্রভাব পড়েছিল নবজাতক শিশুদের মধ্যেও। জানা যাচ্ছে, বেনাপোল বন্দরে উন্মুক্ত অবস্থায় পড়ে আছে রাসায়নিক বর্জ্য। এতে করে বন্দর ব্যবহারকারী এবং আশপাশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন, বলছে বন্দর ব্যবহারকারীরা। তারা বারবার অভিযোগ করেও এই বর্জ্য অপসারণ করাতে পারেনি।
শিল্পকারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা হয় রাসায়নিক পদার্থ। এগুলোর বেশির ভাগ দেশে প্রবেশ করে যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে। কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ অনেক বেশি বিপজ্জনক হওয়ায় সেসব থেকে প্রায়ই আগুন ধরে যায়। কখনো এগুলো থাকে বহনকারী ট্রাকে, আবার কখনো থাকে গুদামে। সেখানেই তেজস্ক্রিয় হয়ে আগুন লাগে। গত দশ বছরে বেনাপোল বন্দরে ছোট-বড় মিলিয়ে সাতটি ঘটনা ঘটেছে এভাবে আগুন লাগার। এসব অগ্নিকান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ রাসায়নিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে এবং সেগুলোই বছরের পর বছর বন্দরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে! এখন পর্যন্ত এসব বর্জ্য নিরাপদ কোনো জায়গায় সরানো হয়নি এবং এসব বন্দরকে অনিরাপদ করে তুলেছে।
বন্দরে পণ্য খালাসের সময় জায়গার সংকট হচ্ছে এসব বর্জ্যের কারণে। বর্জ্যের ধুলা মিশে যাচ্ছে বাতাসে। বৃষ্টি হলে এসব বর্জ্যসহ পানি গিয়ে পড়ছে জনবসতি এলাকার পুকুরে। এতে করে পুকুর ব্যবহারকারীদের চর্মরোগসহ অন্যান্য রোগের ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন এলাকার বাসিন্দারা। 
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা অবশ্য বন্দর কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করছে না। তবে আইনি জটিলতার কারণে নাকি সেখান থেকে বর্জ্য সরানো যাচ্ছে না। আমরা জানি না কী সেই আইনগত জটিলতা। শুধু এটুকু বিশ্বাস রাখতে চাই যে, ডাক্তার আসার পূর্বে রোগী যেন না মরে। অর্থাৎ, বড় ধরণের কোনো ক্ষতি হওয়ার আগেই যেন সেখান থেকে রাসায়নিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়।

্রিন্ট

আরও সংবদ