খুলনা | মঙ্গলবার | ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্বাস্থ্য সূচকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও এগিয়ে বাংলাদেশ

ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ |
০১:০৪ এ.এম | ১৩ নভেম্বর ২০২৩


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সূচকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকেও অনেক এগিয়ে আছে। তার নেতৃত্বে বিগত ১৪ বছরে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে। একসময় দক্ষিণ অঞ্চলের এ শহরটি মানসম্মত স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। এছাড়া গত কয়েক মাস পূর্বে একনেকের মিটিং-এ আরো ৫০০ শয্যা সংযোজনের জন্য প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিগত বিএনপি’র শাসন আমলে শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালকে গোয়াল ঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছায় সেই জরাজীর্ণ শহিদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল আজ বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে সারা বাংলাদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। এখানে উন্নতমানের কার্ডিয়াক, কিডনী, নিউরোলজী ও নিউরো সার্জারীর সেরা সর্বজনবিদিত। এখানে রয়েছে অত্যন্ত উন্নতমানের আইসিইউ সেবার ব্যবস্থা। 
দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবার কথা বিবেচনা করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের চতুর্থতম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে “শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, যার কাজ চলমান। এছাড়া তার এই সময়ে প্রতিষ্ঠিত দেশের হতে যাচ্ছে। ৩য় তম ডেন্টাল কলেজ “খুলনা ডেন্টাল কলেজ”, দেশে দ্রুত বর্ধমান ক্যান্সার চিকিৎসার কথা মাথায় রেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এগিয়ে চলছে খুলনা ক্যান্সার হাসপাতালের কাজ। শিশুদের জন্য নির্মিত হচ্ছে শিশু হাসপাতাল। গত করোনাকালীন সময়ে তারই নির্দেশে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযোগিত হয়েছে ১০টি আইসিউ বেড ও ১০টি এইচডিইউ বেড। অতিস¤প্রতি এডিবি’র সহায়তায় আরো ১০টি আইসিউ বেড ও ১০০ এইচডিইউ বেড প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালকে ভেঙে তৈরি হচ্ছে ২৫০ শয্যার নতুন হাসপাতাল। সদর  হাসাপাতালে সংযোজিত হয়েছে নিজস্ব অক্সিজেন প্লান্ট। এমআরআই, সিটিস্ক্যান মেশিন, ডায়ালাইসিসের মেশিনসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করা হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ এবং শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য খুমেক কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন অত্যাধুনিক এস এম সুলতান অডিটরিয়াম।
শুধু খুলনা নয় সারা বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বর্তমান সরকারে আমলে। ১৮০০০ কমিউনিটি ক্লিনিক পুনরায় চালুর মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মানুষের গড় আয়ু ৬০ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৭৪ বছরে উন্নীত হয়েছে। 
দেশে ইপিআই ও কোভিড টিকা দানে ৯৮ শতাংশ সফলতা এসেছে, যা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও সম্ভব হয়নি। কোভিড মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়া বাংলাদেশ প্রথম ও বিশ্বে ৫ম স্থান দখল করেছে। শিশু মৃত্যুহার ১৫০ থেকে কমে ২৩-এ নেমে এসেছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আগে ছিল ৩ শতাংশ, এখন মাত্র শূন্য দশমিক ৯৮ শতাংশ। দেশে এখন ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হয়েছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পঙ্গু হাসপাতাল এখন ঢাকায়, যার শয্যা সংখ্যা ১০০০। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্মত নিউরোসাইন্স ইনস্টিটিউট, কিডনী হাসপাতাল গ্যাষ্ট্রোলিভার হাসপাতাল ইত্যাদি। চলমান রয়েছে ৮টি বিভাগে ৮টি ক্যান্সার ও শিশু হাসপাতাল।
এছাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট। এতে রয়েছে ৫০০ শয্যা, ২২ শয্যা বিশিষ্ট নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ), রোগীর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য ২২ শয্যা বিশিষ্ট হাই ডেফিসিয়েন্সি ইউনিট (এইচডিইউ), ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি অত্যাধুনিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার পাশাপাশি এখানে জন্মগত ঠোঁটকাটা, তালুকাটাসহ বিভিন্ন রোগীদের প্লাস্টিক ও রিকন্সট্রাক্টিভ সার্জারিরও ব্যবস্থা আছে।
দেশের সব হাসপাতালের সক্ষমতা বাড়ানো, বিশেষায়িত ইন্সটিটিউট, তৃণমূলে কমিউনিটি ক্লিনিক করাসহ স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ। অত্যন্ত জনবহুল এ দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সামলানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বৈশ্বিক সূচকেও দেশের স্বাস্থ্যখাত ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেছে। এ খাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তুলে ধরা হলো।
১. কমিউনিটি ক্লিনিক ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা,  ২. ওষুধ শিল্পে সফলতা,  ৩. ইপিআই, ৪. সফল পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম,  ৫. এমডিজিতে সফলতা লাভ এবং এসডিজির লক্ষ্যে এগিয়ে চলা, ৬. প্রসূতি মৃত্যুহার কমা, ৭. মাথাপিছু গড় আয়ুর অভূতপূর্ব উন্নতি, ৮. চিকিৎসা শিক্ষার প্রসার,  ৯. টেলিমেডিসিন সেবার প্রসার, ১০. মাতৃদুগ্ধ পানে সহায়তায় বিশ্বে প্রথম স্থান অর্জন। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলাগুলোতে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।  করোনাকালীন সময় চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য সেবায় জড়িতদেরকে প্রণোদনা প্রদান।
স্বাস্থ্যখাতে অভুতপূর্ব উন্নয়নের স্বীকৃতি হিসেবে তিনটি জাতিসংঘ পুরস্কারসহ ১৬টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা মিলেছে বাংলাদেশের ঝুঁড়িতে।
প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার উদাত্ত আহŸানে আসুন আমরা দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যা হবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের একমাত্র পথ।
লেখক : উপাধ্যক্ষ খুলনা মেডিকেল কলেজ, সহযোগী অধ্যাপক (অর্থোপেডিক্স) ও বিভাগীয় প্রধান খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, প্রকল্প পরিচালক শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা, বিএমএ খুলনা ও স্বাচিপ খুলনার সাধারণ সম্পাদক।

প্রিন্ট

আরও সংবাদ