খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

প্রসঙ্গ : দূষিত ও অসুস্থ মানসিক অবস্থা

মোঃ ইজাজ |
১২:৩১ এ.এম | ১৮ নভেম্বর ২০২৩


বর্তমানে বায়ু, পানি, সমাজ ও পরিবেশ দূষণের সাথে সাথে মানুষের মানসিক অবস্থাও দূষিত হচ্ছ। দুষিত হচ্ছে মনুষত্ব, দূষিত হচ্ছে বিবেক-বুদ্ধি, জ্ঞান, দুষিত হচ্ছে মানুষের অমূল্য সম্পদ চরিত্র এমনকি মানুষের আত্মাও। 
আধুনিক ডিজিটাল শতভাগ পাসের যুগে আমরা বছরের পর বছর শুধু পাসই করছি, শুধু কয়েকটা সার্টিফিকেটই অর্জন করছি। আমরা কি অর্জন করতে পেরেছি মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, নৈতিকতা, আমরা কি পেরেছি আমাদের সুন্দর চরিত্র গঠন করতে, আমরা কি পেরেছি সুদ-ঘুষ, লোভ-লালশা, হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত জীবন গঠন করতে?  আমরা কি সত্যিই সুশিক্ষায় শিক্ষিত জাতি, আমরা কি সত্যিই সভ্য জাতি? না কি শুধু কাগজে কলমে শিক্ষিতের সংখ্যা বাড়িয়েই চলেছি ?
প্রতিবছর শুধু কাগজে কলমে শিক্ষিতের হার বাড়ছে, শিক্ষিতের শুধুমাত্র সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে শুধু সার্টিফিকেট, বছরের পর বছর বাড়ছে বেকার, বাড?ছে শিক্ষিত বেকার নৈশ প্রহরী।  কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানবিক মূল্যবোধ, মনের উৎকর্ষতা ও নৈতিকতা বাড়ছে না। বাড়ছে না  মনুষত্ব, বাড়ছে না জ্ঞানের পরিধি। যে শিক্ষায় মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায় না, পায় না মস্তিষ্কের উৎকর্ষতা, বছরের পর বছর সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কি লাভ? যদি না জাগ্রত হয় আমাদের মনুষত্ববোধ, বিবেকবোধ। কি লাভ শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করে ? কি লাভ সমাজ, দেশ বা জাতির?
বর্তমান প্রজন্ম মনেহয় শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য লেখা পড়া করছে। কেন যেন  চারদিকে শুধু গাড়ি, বাড়ি, অর্থ, বিত্ত বানানোর একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, হোক সেটা বৈধ বা অবৈধ উপায়ে। আমি এমন একজনকে দেখেছি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি প্রাপ্ত, যে তার একটা শিশু কন্যা কনিকার জন্য ২২০ টাকার একটা দুধ কিনতে পারে নাই, পারে নাই ৫০ টাকার একটা পুঁথির মালা কিনে দিতে অথচ সেই ব্যক্তি আজ তার কন্যা কনিকাকে বিয়ে দেয় ৫০ ভরি স্বর্ণ দিয়ে। তার ছেলেকে দেয় ৩৫ লক্ষ টাকার গাড়ি উপহার। স্ত্রী আর তার কথা বাদই দিলাম। দীর্ঘ ৩০ বছর সে তার বিকৃত মস্তিষ্ক ব্যবহার করে অসহায় সহজ সরল মানুষ গুলোর সরলতার সুযোগ নিয়ে, মিষ্টি ভাষায়, মিথ্যা আশ্বাসে তাদের স্বপ্নকে হত্যা করে অবৈধভাবে টাকার পাহাড় বানিয়েছে, বানিয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ। 
আমি আমার ৫২ বছরের প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে দেখেছি, অশিক্ষিত, দিন মজুর, শ্রমিক তার নিজের সন্তানের জন্য দুধ না কিনে, স্ত্রী সন্তানদের চাহিদাকে কবর দিয়ে, তার নিজের সুখ শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে ছোট ভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছেন, বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করিয়েছেন। বানিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। অথচ সেই ছোট ভাই কোন এক সময় তার বড় ভাইকে চিনে না। চিনে না তার ভাইয়ের ছেলে- মেয়েদেরকে, এমন কি তার আত্মীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশীদেরকে। সে চিনে তার শালীর বান্ধবীর খালাতো বোনের ননদের ছেলে সেলিমকে, সে আরো চিনে তার স্ত্রীর বান্ধবীর মামাতো বোন  বন্নাকে। ধীরে ধীরে আমরা আমাদের রক্তের সম্পর্ককে ভুলে যাচ্ছি, ভুলে যাচ্ছি ভাইয়ের স্নেহ, বোনের মমতা।। আর এসবকে কি আমরা বলতে পারি না হৃদয়ের রক্তক্ষরণ, আত্ম ক্ষরণ, মানসিকভাবে আমরা দূষিত হয়ে গেছি, মানসিকভাবে আমরা অসুস্থ, বিপর্যস্ত । এ সব বাস্তবতা দেখে আমার মনে হয় আমরা অধিকাংশই মানসিক ভাবে ক্যান্সারে আক্রান্ত। 
ফেসবুক-মোবাইল আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে মানসিক প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলছে নাতো? আমরা নিজেরাই নিজের সন্তানের সোনালী ভবিষ্যতকে হত্যা করছি নাতো? আমরা কি পারছি আমাদের সন্তানদের শিক্ষিত না বানিয়ে মানুষ বানাতে ? মানুষই যদি বানাতে পারব তাহলে কেন গণমাধ্যম কর্মীকে এতো বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া আসা, এতো সাক্ষাৎকার? ক্লাসের ২/৪/১০ টা পাঠ্য বই পাঠ করে শুধু পাস করা যায়, শিক্ষিত শ্রমিক হওয়া যায়, কিন্তু মানবিক মানুষ হওয়া যায় না।
বছরের পর বছর শিক্ষিতের হার বাড়ছে ঠিকই কিন্তু জ্ঞানী লোকের হার বাড়ছে কি? শিক্ষিত আর জ্ঞানী তো এক নয়। বর্তমানে আমাদের অসুস্থ বিকালঙ্গ সমাজের জন্য কাগজে কলমে শিক্ষিত লোকের চেয়ে জ্ঞানী লোকের বেশি প্রয়োজন, প্রয়োজন আদর্শ মানুষ, প্রয়োজন সুশিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ।  আমাদের প্রতিটি অভিভাবকের উচিত, ছেলে মেয়েদের হাদিস-কোরআন, পত্র-পত্রিকা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, কবিতা, সাহিত্য চর্চা, নবী-রাসুল ও মহা মনিষীদের  জিবনী পড়ানো । তাদের পড়ানো উচিত সভ্য জাতির ইতিহাস, তাদের পড়ানো উচিত কবরের কঠিন বাস্তবতা ও পরকালের ইতিহাস। তাতে আমি, আমরা, আমাদের সমাজ কিছুটা  হলেও সুস্থ থাকবে, ভালো থাকবে। অন্যথায় এভাবে চলতে থাকলে আমি, আমরা, আমাদের সমাজ তথা সমগ্র দেশ, গোটা জাতি এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়বে এমনকি আমরা মানসিকভাবে বিকালঙ্গ হয়ে যাবো। হারিয়ে ফেলবো আমরা আমাদের  অস্তিত্ব, হারিয়ে ফেলবো আমাদের ব্যাক্তিত্ব, সেই সাথে অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়ে পড়বে মানসিকভাবে বিকালঙ্গ ও বিপর্যস্ত।

্রিন্ট

আরও সংবদ