খুলনা | শনিবার | ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

ফিলিস্তিন-মুক্তির বার্তা নিয়ে বিশ্বকাপ মাঠে দর্শক যেতে হলো জেলে

ক্রীড়া প্রতিবেদক |
০১:১০ এ.এম | ২০ নভেম্বর ২০২৩


বিশ্বকাপের ফাইনাল, ১ লাখ ৩০ হাজার আসন বিশিষ্ট বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়াম আর ম্যাচের সবচেয়ে জনপ্রিয় তারকা বিরাট কোহলি নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়ে এর চেয়ে বড় উপলক্ষ কমই হতে পারে! ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের এক সমর্থক তাই বেছে নিয়েছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় এই মঞ্চটাকেই।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ফাইনালের মহারণ চলাকালে হইচই ফেলে দেন এক যুবক। স্টেডিয়ামের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর ফাঁক গলে মাঠে ঢুকে পড়েন তিনি।
মাঠে অনুপ্রবেশ করেই বিরাট কোহলিকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যায় ফিলিস্তিনের সমর্থনে টি শার্ট পরা সেই যুবককে। ফাইনালের ভেন্যু নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের নিরাপত্তায় বিঘœ ঘটানোর কারণে সেই দর্শককে জেলে পাঠানো হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মাঠে ঢুকে পড়া ওই দর্শককে এই আহমেদাবাদের চন্দখেদা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমকে ওই সমর্থক নিজের পরিচয় ও মাঠে ঢুকে পড়া নিয়ে জানিয়েছেন, তার নাম জন। তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে ভারতে এসেছেন। মূলত বিরাট কোহলির সঙ্গে দেখা করতেই মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি ফিলিস্তিনি সমর্থক বলেও জানালেন।
তার উদ্দেশ্য শুধু পছন্দের খেলোয়াড়কে স্পর্শ করা নয়, বরং ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানানো টি-শার্ট ছিল তার গায়ে। টি-শার্টের পেছনের দিকে লেখা ছিল ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ (ফিলিস্তিন মুক্ত করো)। সামনের দিকে লেখা ছিল-স্টপ বম্বিং প্যালেস্টাইন (ফিলিস্তিনে বোমা ফেলা বন্ধ করো)। তার মুখে পরা মাস্কে ছিল ফিলিস্তিনের পতাকা।  
উলে­খ্য, ইসরাইলি আগ্রাসনে মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা। প্রতিদিন শত শত মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। লাশের গন্ধে ভারি হয়ে উঠছে বাতাস। বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। এমন কী হামলায় আহতরাও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এর আগে ভারত বিশ্বকাপ চলাকালে মাঠে ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করার দায়ে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল বেশ কয়েকজনকে। 
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অব্যাহত হামলার ঘটনায় খেলার মাঠে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন প্রকাশের ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। গত মাসে গ্লাসগোতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে গ্যালারিতে ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে হাজির হন প্রচুর সংখ্যক সেল্টিক সমর্থক। যদিও এ ধরনের কার্যক্রমে ইউরোপীয় ফুটবল কর্তৃপক্ষ উয়েফার শাস্তির ঝুঁকি আছে। 
গত ১৭ অক্টোবর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের খেলায় মালদ্বীপকে হারানোর পর বাংলাদেশ ফুটবল দলও ‘সন্ত্রাসী ইসরায়েল থেকে ফিলিস্তিনকে রক্ষা করুন’ ব্যানার নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে।
ফিলিস্তিনের ওপর ইসরাইলের সা¤প্রতিক হামলার ঘটনায় ক্রিকেট মাঠে প্রথম বড় সমর্থনের দেখা মেলে পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ানের কাছ থেকে। বিশ্বকাপের লিগ পর্বে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাকিস্তানের রেকর্ড গড়া জয়ে ১৩১ রান করা রিজওয়ান তাঁর ইনিংসটিকে ‘গাজার ভাই-বোনদের জন্য উৎসর্গ করেন। এরপর আহমেদাবাদে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে কিছু ভারতীয় দর্শক ইসরাইলের পক্ষে ব্যানার নিয়ে আসেন।
সে দিন ভারতের কাছে পাকিস্তান যে তাদের জয় ‘হামাস সন্ত্রাসবাদীদের উৎসর্গ করতে পারেনি’ এ জন্য উল­াস প্রকাশ করে টুইটও করেন ভারতে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত নাওর গিলন।
তবে রোববার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে ১ লাখের বেশি দর্শকের সামনে অচেনা আগন্তুকের ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বার্তা সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। পরে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানায়, মাঠ থেকে আটক হওয়া ব্যক্তি নিজের নাম ‘জন’ উলে­খ করে জানান, তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। মাঠে ঢুকে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোহলির ভক্ত এবং ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের কথা জানান তিনি। 
এর আগে বিশ্বকাপের লিগ পর্বের ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে ড্যানিয়েল জার্ভিস (জারভো ৬৯ নামে পরিচিত) এক বৃটিশ নাগরিক মাঠে ঢুকে পড়েছিলেন। পরে আইসিসি তাঁকে বিশ্বকাপ মাঠে নিষিদ্ধ করেছিল।
 

প্রিন্ট

আরও সংবাদ