খুলনা | শুক্রবার | ১৭ জানুয়ারী ২০২৫ | ৪ মাঘ ১৪৩১

ফিলিস্তিন, বায়তুল মুকাদ্দাস ও ইসরাইলি রাষ্ট্রের ইতিহাস

প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউসুফ আলী |
১১:১৯ পি.এম | ২৪ নভেম্বর ২০২৩


ফিলিস্তিনের নিরাপরাধ মানুষের উপর চলছে ইসরাইলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা। প্রতিদিন মারা যাচ্ছে নিরাপরাধ শিশু, বৃদ্ধ ও মহিলাসহ অগণিত মুক্তিকামী মুসলমান। হাসপাতাল, আশ্রয়স্থল, চিকিৎসাকেন্দ্র, ইবাদতখানা কোন কিছুই বাদ পড়ছে না হায়েনাদের হাত থেকে। রক্তখাদক ইসরাইলিরা নামাজরত মুসল­ীদের উপর কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্ক্যারজনক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। শহিদ হচ্ছে অগণিত মা-বোন ও শিশু। কিন্তু কেন? কেনই বা এই জায়গাটি নিয়ে এতো দন্দ? ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ?
ইতিহাস থেকে জানা যায়, মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কর্তৃক কাবাঘর নির্মাণের চলি­শ বছর পর তাঁর ছেলে হযরত ইসহাক (আঃ)-এর সন্তান হযরত ইয়াকুব (আঃ) ফিলিস্তিনের জেরুজালেম নামক স্থানে ‘আল-আকসা’ মসজিদটি নির্মাণ করেন। অতঃপর তাঁর ছেলে হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর বংশধর হযরত দাউদ (আঃ)-এর সন্তান হযরত সুলাইমান (আঃ) তা পুনঃনির্মাণ করেন। বায়তুল মুকাদ্দাস আসলে হাজার হাজার বছর ধরে মুসলমানদের অধীনেই ছিল। কিন্তু ইংরেজদের সহায়তায় ইহুদীরা ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের কাছ থেকে জোর করে এই পবিত্র মসজিদটি দখল করে নিয়েছে। এখনও ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে মুসলমান অধ্যুষিত এলাকাগুলো। বর্তমান জেরুজালেমের পূর্ব নাম ছিল আল-কুদস যেখানে বায়তুল মুকাদ্দস মসজিদটি অবস্থিত। বায়তুল মুকাদ্দস মসজিদটির আর এক নাম হলো মাসজিদুল আকসা অর্থাত দূরবর্তী মসজিদ। কারণ এই মসজিদটি মক্কা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। দ্বিতীয় খলিফাতুল মুসলিমিন ফারুকে আজম হযরত উমর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ৬৩৮ সালে বায়তুল মুকাদ্দাস, জেরুজালেমসহ গোটা ফিলিস্তিন সম্পূর্ণরূপে মুসলমানদের অধিকারে আসে। ১০৯৬ সালে খ্রিষ্টান ক্রুসেডাররা সিরিয়া ও ফিলিস্তিন জবরদখল করে নেয়। ১১৮৭ সালে মুসলিম বীর সিপাহসালার সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবি (রঃ) পুনরায় জেরুজালেম শহর মুসলমানদের অধিকারে নিয়ে আসেন। এরপর থেকে ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা তৎকালীন তুরস্কের শাসক সুলতান আবদুল হামিদের কাছে ফিলিস্তিনে বসতির অনুমতি চায়। কিন্তু দূরদর্শী সুলতান তাদের এ দুরভিসন্ধিমূলক প্রস্তাবে রাজি হননি। ১৯১৭ সালে ইংরেজরা ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে এবং ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে; অল্প সময়ের মধ্যে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভ‚মিতে ইহুদিদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুসলমানদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দাঙ্গা নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়। এ সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদের ফিলিস্তিন ভ‚মিকে মুসলমান ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করে দেয়। ফলে ১৯৪৮ সালের ১৫ মে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে জায়ানবাদী অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে মুসলমানদের প্রতি ইসরাইলিদের জুলুম, নির্যাতন ও অত্যাচারের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে, যা অদ্যাবধি চলছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রাষ্ট্র ইসরাইল ১৯৬৭ সালে ‘মসজিদুল আকসা’ জবরদখল করে নেয়। এরপর থেকে সেখানকার মুসলিম জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইসরাইলিরা একের পর এক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা জবরদখল করে ইহুদি বসতি স¤প্রসারণ অব্যাহত রাখে এবং হত্যা-গুম চালিয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জনগণ ফিলিস্তিনিদের এই প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা ও সমর্থন করে যাচ্ছে। 
বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ এবং তার আশপাশের এলাকা বহু নবীর স্মৃতিবিজড়িত স্থান। এ পবিত্র নাম শুধু একটি স্থানের সঙ্গে জড়িত নয় বরং এ নাম সব মুসলমানের ঈমান ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এখানে ঘুমিয়ে আছেন অসংখ্য নবী-রসুল (আঃ)। মুসলিমদের সব দল, উপদল, মাজহাব এ ব্যাপারে একমত যে, ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, মসজিদে আকসা এবং সমগ্র ফিলিস্তিনের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অনেক উচ্চ। এর সংরক্ষণ, পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়; বরং সব মুসলিমের ওপর দায়িত্ব। ঐতিহাসিকভাবেই এটি মুসলমানদের পবিত্র স্থান। মুসলমানরা তাদের পবিত্র ভ‚মি, প্রথম কিবলা ও তৃতীয় পবিত্রতম মসজিদ দ্রুত ফিরে পাক- এটাই আমাদের কামনা। 
লেখক : মৎস্য-বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, পোস্ট-ডক্টরাল ভিজিটিং ফেলো, সিডনী।

্রিন্ট

আরও সংবদ