খুলনা | বুধবার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১

ভর্তিযুদ্ধ ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

|
১২:১৯ এ.এম | ৩০ নভেম্বর ২০২৩

এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ হলো তিন দিন আগে। এবার ছাত্র-ছাত্রীদের অংশ নিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সবচেয়ে কঠিন প্রস্তুতির নাম ভর্তিযুদ্ধ। আমরা চাই, সব শিক্ষার্থী কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোক। কিন্তু মানভেদে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুরা ভর্তি হতে পারে না। এটা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এনে দেয়। প্রত্যেকেই চান, তার সন্তান সবচেয়ে ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হোক। কিন্তু দেশে এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। জানা গেছে, চলতি বছর সারাদেশে এইচএসসি ও সমমানে পাশ করেছেন ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন। সারাদেশে ভর্তিযোগ্য আসনের সংকট না থাকলেও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় বা চাহিদামাফিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাবে না অনেকে। ফলাফলে দেখা গেছে, সারাদেশে চলতি বছরে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। এই শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য থাকে মূলত সরকারি বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৭০ হাজার। সে হিসাবে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদেরও আসন হবে না এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে মাত্র ৫৭ হাজার ৯৯টি। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে এমবিবিএস কোর্সে চলতি বছর ১ হাজার ৩০টি আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮০টিতে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতেই ভর্তিচ্ছুদের সম্মুখীন হতে হবে বড় প্রতিযোগিতার। চলমান শিক্ষার উদ্দেশ্যের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও হচ্ছে, অনেকেই সেখানে শিক্ষক হচ্ছেন- এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন উঠছে শিক্ষকদের যোগ্যতা নিয়ে। উচ্চশিক্ষার মান ধসে শিক্ষকের দায়ও কোনোভাবেই এড়ানো সম্ভব নয়। অবশ্যই এমন সব নিয়োগে কর্তৃপক্ষেরও অবহেলা রয়েছে। সময়ের চাহিদা পূরণে মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়েনি। বরং বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশকে কেন্দ্র করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে গড়ে উঠছে ব্যাঙের ছাতার মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আয় করছে। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব ও ভর্তি সংকটের সুযোগে বেসরকারি ও বিদেশি নামধারী বিশ্ববিদ্যালগুলোর তথাকথিত শাখা বা ক্যাম্পাস গড়ে উঠতে দেখা যায়। শিক্ষার এমন হাল দুঃখজনক। আমরা যদি আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে চাই, তাহলে শিক্ষার সব স্তরে মান উন্নয়নের পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে দেশে ভর্তি বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য, ভর্তি আতঙ্ক ও নানামুখী ভোগান্তি কমবে। সবচেয়ে বড় কথা শিক্ষার গুণগত মানেও পরিবর্তন আসবে।

্রিন্ট

আরও সংবদ