খুলনা | রবিবার | ০৬ জুলাই ২০২৫ | ২২ আষাঢ় ১৪৩২

খুলনায় ভুয়া ডাক্তারের ছড়াছড়ি, প্রতারিত হচ্ছে জনগণ : নির্বিকার স্বাস্থ্য প্রশাসন

বশির হোসেন |
০১:০৯ এ.এম | ২৮ অগাস্ট ২০২১

গ্রামে বা শহরে ওষুধের দোকান দিয়ে যারা হাতুড়ে ডাক্তারি করেন তাদের ছাপিয়ে গেছেন শিক্ষিত প্রতারক চিকিৎসক। ওদের কেউ ছিলেন ডাক্তারের সহকারী, কেউ বা হারবাল, ইউনানী, অলটারনেটিভ মেডিসিন কিছু পড়ালেখাও করেছেন, কেউ ছিলেন ওয়ার্ডবয় বা হাসপাতালের কর্মচারী অথচ এরাই মহানগর জুড়ে চিকিৎসার পশরা সাজিয়ে বসেছে। এমবিবিএস, এফসিপিএসসহ অজানা আজগুবি সব ডিগ্রি লিখে ডায়াগনস্টিক আর ক্লিনিকের শহর খুলনায় চলছে নিত্য নতুন প্রতারণার ফাঁদ। একের পর এক রোগী মারা যাচ্ছে। তখনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে, জামিনে বের হয়ে আবারও মানুষ মারার এ কাজে নেমে পড়ছে। এতে সব থেকে বেশি যাদের তৎপর থাকার কথা স্বাস্থ্য প্রশাসন তাদেরই সব থেকে বেশি রহস্যজনক নিরবতা। মাঝে মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি দেখা গেলেও নিজ উদ্যোগে এই অপতৎপরতা বন্ধে কোন কার্যক্রম দৃশ্যমান নয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের। 

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, খুলনার বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ সহিদ হোসেন ওরফে মোঃ নুর আফজাল, যিনি এমবিবিএস পাশ করে পুলিশ হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার থাকলেও এখন নামের পাশে এমএস ডিগ্রি লিখে অর্থোপেডিক্স অপারেশন করছেন খুলনার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে। নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকানাও রয়েছে তার। তার এই ডিগ্রি লেখার বিরুদ্ধে অভিযোগ গেলে বিএমডিসি, অর্থোপেডিক্স সোসাইটি ও পুলিশ আভ্যন্তরীণ ভাবে তদন্ত করলে সেখানে তিনি ভারত থেকে এ কোর্স করেছেন বলে দাবি করলেও তার এ ডিগ্রিকে ভুয়া ও এ ধরনের তৎপরতা অনৈতিক বলে দাবি করেছেন খুলনার অর্থোপেডিক্স সার্জনদের সংগঠনের নেতারা।

নগরীর স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ রাকিব হত্যাকান্ডের পর তার রাইসা ক্লিনিক লিজ নেন ভুয়া চিকিৎসক মোঃ শরিফ। গল­¬ামারীর ঐ ক্লিনিকের নাম কিছুটা পরিবর্তন করে নিউ রাইসা ক্লিনিক নামকরণ করে নিয়মিত সকালে রোগী দেখেন তিনি। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক অভিযোগ এই ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে। নগরীর প্রাণ কেন্দ্রে তার আরও একটি ক্লিনিক রয়েছে। রেটিনা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার সাইনবোর্ডের ই-মেইলে নিজের নামের সাথে ডাঃ ব্যবহার করেছেন এই ভুয়া ডাক্তার শরিফ। জানা যায় বিভিন্ন ক্লিনিকে চাকুরি স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতায় এই ব্যবসা জমিয়েছেন তিনি। 

নগরীর জিরোপয়েন্ট এলাকায় সুন্দরবন ক্লিনিকে ভুয়া ডাক্তারি ও বাচ্চা কেনা বেচায় অভিযোগে ক্লিনিকের মালিক ও ভুয়া ডাক্তার পিকে মন্ডল। চিকিৎসাশাস্ত্রের  বৈধ ডিগ্রি না থাকা সত্তে¡ও পি কে মন্ডল নামের এই ব্যক্তি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিতেন, শুধু তাই নয়- তিনি মেজর অপারেশনও করতেন। ক্লিনিকে ভুল অপারেশনে কয়েকজন নারী ও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের এ ক্লিনিকটিতে কোন নার্স, ওয়ার্ড বয় বা টেকনিক্যাল হ্যান্ডস্ নেই। এমনকি অন্য কোন চিকিৎসকও আসতেন না এখানে। অবশেষে র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে এখন শ্রীঘরে।

সর্বশেষ গত বুধবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে র‌্যাব-৬ খুলনার একটি আভিযানিক দল এবং খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট-এর সহযোগিতায় রূপসা থানাধীন নৈহাটী কর্ণপুর স্টেশন মোড় এলাকায় আরাফাত হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে রোগীর ভুল চিকিৎসা করার দায়ে মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০ এর ২২ (২) ধারা মোতাবেক (ভুয়া ডাক্তার) ডাঃ মোঃ কামরুজ্জামান আটক করে জেল ও জরিমানা প্রদান করে।

নগরীর প্রাণকেন্দ্র শান্তিধাম মোড়ে ডাঃ গোলাম মাসুদ মৃধা, তার নামের সাথে এমবিবিএস, এমডি, এফআরসিএস সবই লেখা আছে তার। চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ পরিচয় দেয়া এই ডাক্তারের কোন ডিগ্রিই বাংলাদেশ সরকার বা বিএমডিসি অনুমোদিত নয়, অথচ রোগী দেখে যাচ্ছেন দেদারসে। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে নিউজ করতে নিষেধ করে বলেন হাইকোর্টে অলটারনেটিভ মেডিসিন নিয়ে তাদের রীট করা আছে। স¤প্রতি হাইকোর্টের রায়ে তাদের আশা ভঙ্গ হলেও থামেনি রোগীদের সাথে প্রতারণা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে অসত্য তথ্য দিয়ে অনলাইনে আবেদন করেই নগরীতে বেআইনী ভাবে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। 

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, এসব অবৈধ চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। একটি তথ্য পাওয়ার পরই আমরা যাচাই বাছাই করে কার্যক্রম শুরু করে দেই। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অপতৎরতা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। 

্রিন্ট

আরও সংবদ