খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

অদ্ভুত প্রকারের ব্যক্তিত্ব বিকৃতি সাইকোপ্যাথ, কারণ ও প্রতিকার

প্রকাশ চন্দ্র অধিকারী, মনোবিজ্ঞানী |
০১:৪০ এ.এম | ২৮ অগাস্ট ২০২১

কেস স্ট্যাডি-(১) সুমন (ছদ্ম নাম) বয়স ২২ বছর। দেখা মতে মনে হয় তার লজ্জাবোধ নাই বললে চলে। সে যখন অন্যের জন্য কোন বিষয়ে সমবেদনা বা দুঃখ- যাই প্রকাশ করে থাকে, তাহা অনেকটা অভিনয় মাত্র। ইতিবাচক আবেগ না থাকার দরুন সে প্রায় অন্যের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়ে থাকে।
কেস স্ট্যাডি-(২) ছোয়া (ছদ্ম নাম) বয়স ২০ বছর। তার কাজের ধরণ দেখে মনে হয়, সে অনেকটা স্বার্থপার ও অনুশোচনাহীন ব্যক্তি। সে নিজের আত্মমর্যাদা সম্পর্কে ফোলানো ফাপানো আত্মধারণা পোষণ করে। অন্যকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে সে মোটেই লজ্জাবোধ করে না। মুহূর্তে বা উত্তেজনার বশে কাজ কারার প্রবনতা তার মধ্যে বেশ প্রবল।
উপরের দু’টি ঘটনার ব্যক্তিত্বের ধরণ সাইকোপ্যাথি হিসেবে বিবেচিত। সাকোপ্যাথি ব্যক্তিত্ব যদিও সমাজে তুলনামূলক কম তবুও তাদের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। এদের আচরণ ও ভাবাদর্শন আমাদেরকে বেশ হতাশ ও মর্মাহত করে তবুও এদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের জীবনযাত্রা পরিবাহিত।
সাইকোপ্যাথি চেনার উপায় : সাধারণ মানুষের মতই চেহারা ও অন্যান্য আকৃতি হওয়াই, স্বাভাবিক ভাবে কতকগুলো বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এদেরকে পৃথক করা হয়। বৈশিষ্ট্য সমূহ হলো- (১) এরা স্বার্থপর ও অনুশোচনা বিহীন। (২) এরা ভুল হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে অক্ষম। (৩) এদের মধ্যে নিজের স্বার্থে অন্যকে ব্যবহার করার প্রবনতা বেশি। (৪) ইতিবাচক বা নেতিবাচক এই উভয় প্রকার আবেগের ক্ষেত্রে এদের মধ্যে দৈন্যদশা বিদ্যমান। (৫) এদের মধ্যে মোহের বশে আচরণ করার প্রবনতা বেশি। (৬) এরা প্রায় অন্যদের প্রতি প্রায় দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ প্রদর্শন করে থাকে। (৭) এরা প্রায় সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকে। (৮) নিজের দোষ-ত্র“টি বেলায় এরা প্রায় অন্ধ ও একপেশে মতামত ব্যক্ত করে থাকে। (৯) এদের চেহারার মধ্যে বেশ আকর্ষণীয় ও পরিপাটি ভাব বিদ্যমান। (১০) এরা বেশ মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকে। (১১) এরা সুন্দর ও মনের মত করে গল্প তৈরি করতে ও উপাস্থাপন করতে বেশ পারদর্শী। (১২) এদের অনেকেরই কোন না কোন এলকোহল বা মাদকের উপর নির্ভরতা দেখা যায়। (১৩) এরা মিথ্যা ভাষণে বেশ অভ্যস্ত।
সাইকোপ্যাথিক ব্যক্তিত্বের কারণ : 

(১) বংশগতির প্রভাব : সাইকোপ্যাথ ব্যক্তিত্বের সাথে বংশগতির ভূমিকা অনন্য। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে যাদের বংশে সাইকোপ্যাথ ব্যক্তিত্বের কোন ব্যক্তি বর্তমান থাকে, তাদের সন্তানদের মধ্যে সাইকোপ্যাথ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। 

(২) পিতা-মাতার ভূমিকা : গবেষণায় দেখা গেছে যে, পিতা-মাতার মধ্যে উচ্চ মাত্রার দ্ব›দ্ব-সংঘাত, নেতিবাচক আচরণ ও শিশুর প্রতি পিতা-মাতার উষ্ণ সম্পর্কের অভাব শিশুর মধ্যে সাইকোপ্যাথি আচরণ বিকাশে ভবিষ্যৎবাণী করতে সহায়ক হতে পারে। 

(৩) জৈবিক কারণ : বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের শরীরে গুলুকোজ বিপাক ক্রিয়ায় অস্বাভাবিকতা এবং অপয়েড নিউরোট্রেনেন্স মিটার তার প্রকৃত চরিত্রের কাজ সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তখন ব্যক্তি সমাজ বিরোধী কাজে উৎফুল­তা লাভ করে যা ব্যক্তিকে সাইকোপ্যাথিতে পরিণত করতে সহায়তা করে। 

(৪) পীড়নজনীত কারণ : শৈশবের কোন দুঃখদায়ক ঘটনা যা মনে পড়লে ব্যক্তির মনের মধ্যে কষ্ট দেখা দেয়- এ প্রকার পীড়নমূলক ঘটনা ব্যক্তিকে সাইকোপ্যাথ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
সাইকোপ্যাথ ব্যক্তিত্ব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে- (১) যাদের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ রয়েছে। (২) যাদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক আচরণের অভিযোগ রয়েছে। (৩) যাদের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের প্রতি অসাদাচরণ প্রদর্শনের অভিযোগ রয়েছে। (৪) যাদের পরিবারে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকে না। (৫) যাদের পিতা-মাতা সমাজ বিরোধী আচরণের সাথে জড়িত।
সাইকোপ্যাথের চিকিৎসা : সাইকোপ্যাথ ব্যক্তিত্বের লোকেরা সহজে পরিবর্তনশীল নয় কারণ এরা ঘাত প্রতিঘাত হতে শিক্ষা গ্রহণ করতে ব্যর্থ। অনেক সময় বিভিন্ন উদ্বেগনাশক ঔষধ প্রয়োগ করলে তাদের ক্রোধ অনেকটা কমে যায়। সাইকোপ্যাথদের বিশেষ ধরনের চিন্তার কাঠামো এবং যৌক্তিক স্বতঃসিদ্ধ রয়েছে যে গুলো পরিবর্তন করা সম্ভব। তাদের ঐ সব চিন্তা কাঠামো পরিবর্তন করা গেলে আচরণের উন্নতি ঘটে। তাদের ভ্রান্ত বিশ^াস সমূহ দূর করার জন্য জ্ঞানীয় চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পরে।
(লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজ ,খুলনা।)
Email:- [email protected]

্রিন্ট

আরও সংবদ