খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার কাছে ঋণী, চিরঋণী

মোঃ ইজাজ |
১২:২৮ এ.এম | ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩


যে দেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভূখন্ডের সাথে মিশে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রক্তের গন্ধ, ৩০ লক্ষ শহীদের আর্তনাদ, চেনা-অচেনা শত সহস্র স্বজনহারা বেদনার তীব্র চিৎকার, যার প্রাণের বিনিময়ে আমরা পেলাম একটা স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্র। যিনি অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে গেলেন একটা নিজস্ব লাল সবুজ পতাকা, রেখে গেলেন একটা মানচিত্র, নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি, আমরা তাঁর কাছে ঋণী, চিরঋণী।
যিনি সিংহাসনের লোভ না করে, নিজের সুখ বিলাসী জীবন যাপনের কথা ভুলে গিয়ে, পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর অমানসিক জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার আর শোষনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন, যিনি জীবন যৌবন বিসর্জন দিয়ে অসহায়, নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে কথা বললেন, অনাহারীর মুখে আহার তুলে দিলেন, যার রাজনীতির সমীকরণ ছিল শুধুমাত্র দরিদ্র অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফুটানো, দেশ ও দেশের মানুষকে হায়ানার কবল থেকে মুক্ত করা, উন্নত ও সমৃদ্ধশালী তথা সোনার বাংলা গড়ে তোলাই ছিল যার একমাত্র স্বপ্ন, আমরা বাঙ্গালী জাতি তাঁর কাছে ঋণী, চিরঋণী।
আজ আমরা যে ভূখন্ডে দাঁড়িয়ে কথা বলি, যে মাতৃভাষায় কথা বলি, কথা বলি যে বর্ণমালায়, সেই ভূখণ্ড, সেই ভাষা ও বর্ণমালার সাথে মিশে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ইতিহাস, তাঁর পরিবার এমনকি শিশু পুত্র শেখ রাসেলের রক্তের ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু আমাদের কাছে ঠিক যেন বায়ু প্রবাহের মতো, যে বায়ু প্রবাহ ছাড়া বাঁচি না আমি, আমরা, আমাদের সন্তানেরা এবং অনাগত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমরা ঋণী, আমরা সমগ্র বাঙালী জাতি বঙ্গবন্ধুর কাছে চিরঋণী।।
৭১এর ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাত্রির প্রতি ঘৃণা জানিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর পরিবারের রক্তে ভেজা মাটিতে না আসলেও পারতেন। ইচ্ছা করলে তিনি জার্মান, জাপান, ইংল্যান্ড সহ যেকোনো উন্নত বিশ্বে উন্নত জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি এসেছিলেন, তিনি এসেছিলেন তাঁর প্রয়াত পিতার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও তাঁর স্বপ্নকে বাস্তবতার আলো দেখাতে। তিনি জানতেন, তাঁর পিতা এদেশের মানুষকে ভালবাসতেন, এদেশকে তিনি সোনার বাংলা রূপে গড়তে চেয়েছিলেন। বিশ্বের মানচিত্রে ও বিশ্ব বাসীর কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে ও পরিচিত করতে চেয়েছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২১শে ফেব্র“য়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত করেছিলেন। শেখ হাসিনার সেই অনবদ্য ভূমিকা বা পদক্ষেপের কাছে আমরা ঋণী, চিরঋণী। 
শেখ হাসিনার কাছে আমরা যতভাবে ঋণী তার মধ্যে অন্যতম হলো পদ্মা সেতু। বিশেষ করে আমাদের দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের সাথে পদ্মা নদীর প্রতিটি ফোঁটা ফোঁটা পানির সাথে মিশে রয়েছে শত সহস্র স্মৃতি, অনেক বেদনা, কষ্ট ও যন্ত্রণার স্মৃতি। মিশে রয়েছে অনেক আক্ষেপ ও অপেক্ষার স্মৃতি। এম্বুলেন্সের মধ্যে বা ফেরিতে বসে কত শত পিতা হারিয়েছে পুত্রকে, পুত্র হারিয়েছে পিতাকে। বোন ভাইকে, ভাই বোনকে। অকালে বিধবা হয়েছে হাজারো বোন। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ লাইনের পিছনে অসুস্থ ও মৃত দেহ নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে অসংখ্য মানুষ। ঈদ পূজা পার্বণে দেখেছি ফেরি ঘাটে ঈদের নামাজ পড়তে। সেই সময় লঞ্চে উঠা নামা ছিল এক প্রকার অঘোষিত যুদ্ধ।
ফেরির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অসংখ্য শিক্ষার্থী পারেনি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে, পারে নাই চাকুরির ভাইভা দিতে, অনেক বিদেশগামী ভাই বন্ধু পারেনি সময় মতো বিমান বন্দরে পৌঁছাতে। অনেকে পারিনি তাঁর পিতার জানাযায় শরীক হতে, পারে নাই মাকে দাফন করতে। কখনো কখনো আমাদের ৩০-৩৫ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে শুধু নদীটা পাড়ি দেওয়ার জন্য। ঘন কুয়াশার মাঝে নদীর মাঝখানে হঠাৎ ফেরি থেমে যাওয়া ছিল নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। দীর্ঘ ৩৩টি বসন্ত আমরা এই প্রতিকূলতা ও  ঘটনা দুর্ঘটনার সাথে অঘোষিত যুদ্ধ করতে করতে যখন ক্লান্ত, শ্রান্ত, ঠিক তখনই বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা হাজারো ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে আমাদের জন্য নির্মাণ করলেন পদ্মা সেতু। 
এখন আর আমাদের স্বজন হারানোর কান্না শুনতে হয় না, শুনতে হয় না ফেরি বা এম্বুলেন্সের মধ্যে কোনো বোন বা মায়ের সন্তান প্রসবের যন্ত্রণার চিৎকার। পদ্মা নদী নিয়েছে আমাদের হাজারো প্রাণ, আর পদ্মা সেতু দিয়েছে নব নব প্রাণ।  এরপরও কি আমরা বলবো না, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কাছে আমরা ঋণী, চিরঋণী !!!!!!!!!! ।

্রিন্ট

আরও সংবদ