খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিক্রি কালে ক্যামেরায় যেভাবে বন্দি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে তেল চুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৫১ এ.এম | ৩০ অগাস্ট ২০২১

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে তেল চুরি করে বিক্রি করেন চালক সেলিম আজমল। গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে মেট্রোপলিটন পেট্রোল পাম্পে এ প্রতিবেদকের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। সময়ের খবর’র সিনিয়র রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম নূর তাৎক্ষণিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে তেল চুরির ঘটনাটি মোবাইল ক্যামেরাবন্দি করেন। তেল চুরির অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে বিশ^বিদ্যালয়ের বাস চালক সেলিম আজমলের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটের দিকে মেট্রোপলিটন পেট্রোল পাম্পের টয়লেটে যাচ্ছিলেন এ প্রতিবেদক। এমন সময়ে পাম্পের গ্যারেজে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা মেট্রো ঝ ১১-০০০৬ নম্বরের বাসটি একজন শ্রমিক পানি দিয়ে ওয়াশ করছিলেন, আরেকজন শ্রমিক বাসের নিচে পাইপ ঢুকিয়ে ত্রিশ লিটারের বড় ড্রামে বাস থেকে তেল চুরি করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে তেল বের করার দৃশ্য দেখেই মোবাইল ক্যামেরায় ভিডিও করা শুরু করেন এ প্রতিবেদক। মুহূর্তেই বাসটির চালক সেলিম আজমল এগিয়ে এসে মোবাইলে চিত্রধারনের কারণ ও প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে-বাসটির চালক তাৎক্ষণিক এ প্রতিবেদককে জানান, ‘বাসটি ওয়াশ করতে এক লিটার তেল প্রয়োজন, তাই ওরা বের করছে।’ কিন্তু এতো বড় ড্রামে কেন? এ প্রশ্নের পর প্রতিবেদকের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেবার চেষ্টা করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চালক সেলিম আজমল। পরে সাথে থাকা অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বার্তা ২৪ ডট কম’র খুলনা করেসপডেন্ট মানজারুল ইসলামের সহায়তায় দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এ প্রতিবেদক।

পাম্পটির একাধিক শ্রমিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে সময়ের খবরকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো এই পাম্প থেকেই ওয়াশ ও সার্ভিসিং করানো হয়। বাসের চালকদের সাথে সখ্যতার কাররে সামান্য লাভের বিনিময়ে তেল চুরি কাজে সহযোগিতা করেন বলে সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন একাধিক শ্রমিক।

তবে একজন শ্রমিক বলেছেন, ‘চালকদের এমন সুযোগ না দিলে, তারা কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে (তাদের সুযোগ-সুবিধা দেয়া) অন্য পাম্পে বাস নিয়ে যাবে। সে কারনে বাধ্য হয়েই বাস চালকদের এমন অন্যায় আবদার মেনে নিয়ে তাদের অনৈতিক কাজে সহযোগিতা করতে হয়।’

তবে তেল চুরির অভিযোগ অস্বীকার করে বাস চালক সেলিম আজমল বলেছেন, ‘মাত্র চার লিটার তেল বের করেছিলাম। দুই লিটার তেল মবিলে মিশিয়ে মেশিন ওয়াশ করি, আর দুই লিটার ওদের জন্য। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় গাড়ি সার্ভিসিং বাবদ একশ’ টাকা কম দিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।’

প্রকৃতপক্ষে ত্রিশ লিটার ড্রামের অর্ধেকের বেশি তেল ভর্তি হয়েছিল, ভিডিও ধারণ করায় শ্রমিকটি ড্রাম রেখে দ্রুত পালিয়ে যায়। 
খুবি কর্মকর্তাদের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, বাস চালক সেলিম আজমল বছর দুয়েক আগে বেনাপোলে ফেন্সিডিলসহ আটকের পর বেশ কিছুদিন কারাবাসে ছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩১টি নিজস্ব পরিবহন ও প্রজেক্টের একটি গাড়ি রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহনের মধ্যে ১২টি বড় বাস, চারটি মিনিবাস, দু’টি এসি কোস্টার, তিনটি এসি মাইক্রো, দু’টি ননএসি মাইক্রো, দু’টি এ্যাম্বুলেন্স, দু’টি পাজেরো, একটি এভেনজা কার, একটি এএসএক্স কার রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. শেখ জুলফিকার হোসাইন বলেন, “বিষয়টি আমি আগেও শুনেছি, তবে প্রমাণ পাইনি। যদি বাস থেকে তেল চুরির যথাযথ প্রমাণ পাই অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আমি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সুপারিশ করবো। এক চুল পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না। অবশ্যই চুরির সুষ্ঠু প্রমাণ পেলে আইনগত ভাবে কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে।

তিন বছরে পরিবহন ফি বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি : ২০১৫ সালে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী ও ২০১৮ সালে ভর্তি হওয়া এক শিক্ষার্থীর টাকা জমা দেয়ার রসিদ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- আগে পরিবহন ফি ছিল ৪০০ টাকা, সেখানে নতুন শিক্ষার্থীরা দিয়েছেন ৯০০ টাকা করে। দ্বিগুনের বেশি পরিবহন ফিসসহ অন্যান্য খরচ কমানোর পাঁচদফা দাবিতে করোনা পরিস্থিতির পূর্ব থেকেই আন্দোলন করছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রসঙ্গত্ব, প্রতিটি খাত মিলিয়ে কোর্স ফি ছাড়া ২০১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা প্রতি টার্মে ৯৯২টাকা দিতেন। আর ২০১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা দেন ২ হাজার ৪২১টাকা।