খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

দ্বিতীয় দফায় পূর্ণমন্ত্রী হচ্ছেন নারায়ন চন্দ্র চন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৪৯ এ.এম | ১১ জানুয়ারী ২০২৪


দ্বিতীয়বারের মতো পূর্ণমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রবীণ আ’লীগ নেতা নারায়ন চন্দ্র চন্দ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানেই তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপধ নেবেন।
এর আগে শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও পরে পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হলেও তাকে রাখা হয়নি মন্ত্রী পরিষদে। পাঁচ বছর পর আবারও পূর্ণমন্ত্রী হয়ে ফিরছেন মন্ত্রীপরিষদে।
গত ৭ জানুয়ারি তিনি ৫ম বারের মতো খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসন থেকে বিজয় লাভ করেন। নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকে নিয়ে পান ১ লাখ ১০ হাজার ২১৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ আকরাম হোসেন ঈগল প্রতীকে পেয়েছেন ৯৩ হাজার ৭৭ ভোট।
সংক্ষিপ্ত জীবনী : নারায়ন চন্দ্র খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৯৪৫ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম কালীপদ চন্দ ও মাতার নাম রেণুকা বালা চন্দ। নারায়ন চন্দ্র উলাগ্রামের পাঠশালায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করে বান্দা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৬১ সালে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক্যুলেশন পাস করেন। ১৯৬৩ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৬ সালে তিনি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স এবং ১৯৬৭ সালে একই বিষয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন। চাকুরি করাকালীন সময়ে ১৯৭২ সালে তিনি বিএড পাস করেন।
কর্মজীবন : নারায়ন চন্দ্র চন্দ ডুমুরিয়ার সাহস নোয়াকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালের ৭ মে ডুমুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি ২০০৫ সালের ১১ মার্চ চাকুরি থেকে অবসর নেন।
শিক্ষক নেতা : ১৯৬৮ সালে নারায়ন চন্দ্র চন্দ মাধ্যমিক শিক্ষকদের ঐক্যবদ্ধ করতে প্রতিষ্ঠা করেন থানা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ১৯৮৭ সালে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই পদে দায়িত্ব পালন করেন। 
রাজনৈতিক জীবন : নারায়ন চন্দ্র চন্দ ১৯৬৭ সালে আ’লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে আ’লীগের ডুমুরিয়া থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৮৪ সালে তিনি ডুমুরিয়া থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯৫ সালে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে গঠিত কমিটিতেও তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি আ’লীগ খুলনা জেলা শাখার সদস্য। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের কেন্দ্রীয় আহবায়ক ছিলেন।
জনপ্রতিনিধিত্ব : নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। ছয় মেয়াদে তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য, তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সালাহউদ্দিন ইউসুফের মৃত্যুর পর ২০০০ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে নারায়ন চন্দ্র চন্দ বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা) আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তাঁকে বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনয়নে চারদলীয় জোট সমর্থিত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মিয়া গোলাম পরোয়ারের নিকট পরাজিত হন।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনয়নে জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ারকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনয়নে খুলনা-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
শেখ হাসিনার তৃতীয় মন্ত্রিসভায় তিনি ২৫ জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২ জানুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও ২ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-৫ আসন থেকে বাংলাদেশ আ’লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। 
পারিবারিক জীবন : নারায়ন চন্দ্র চন্দের স্ত্রী একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাঁদের তিন পুত্র ও এক কন্যা। জ্যেষ্ঠ পুত্র বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনারারী সদস্য। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক এবং পূর্বে পরপর দুই মেয়াদে ডীন ছিলেন। দ্বিতীয় পুত্র ব্যবসায়ী ও কনিষ্ঠ পুত্র খুলনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ছিলেন। তাঁর জামাতা বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম ছিলেন।