খুলনা | রবিবার | ০১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নামাজ ভঙ্গের ১৯ কারণ

খবর প্রতিবেদন |
০২:০৮ পি.এম | ২৪ জানুয়ারী ২০২৪

 

ঈমানদার ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড় ইবাদত নামাজ। এটি ফরজ ইবাদত ও ইসলামের অন্যতম রুকন। ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে, সাগরে-মহাকাশে যেখানে যে অবস্থায়ই থাকেন না কেন, নামাজ পড়তেই হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ ও ফরজ ইবাদতে কিছু অসাবধানতা থেকে বেঁচে থাকতে হয়; অন্যথায় নামাজ ভেঙে যায়। যেসব কারণে নামাজ ভেঙে যায়, এখানে সেগুলো সংক্ষিপ্তাকারে তুলে ধরা হলো।

১. অশুদ্ধ কেরাত পড়া। যতটুকু অশুদ্ধ পড়লে কোরআনের অর্থ ও উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই নামাজ আবার পড়তে হবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬৩৩-৬৩৪; হিন্দিয়া: ১/৮০, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৩৪৪)

২.  কথা বলা। অর্থাৎ নামাজে এমন কোনো অর্থবোধক শব্দ করা, যা সাধারণ কথার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/৬১৩; আল বাহরুর রায়েক: ২/২)

৩.  কাউকে সালাম দেওয়া। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৯২; আল বাহরুর রায়েক: ২/১২০)

৪.  কারো সালামের উত্তর দেওয়া। (বুখারি: ১২১৭)

৫. ব্যথা কিংবা দুঃখে উহ-আহ শব্দ করা। (আদ্দুররুল মুখতার: ১/৬১৯; আল বাহরুর রায়েক: ২/৪; মারাকিল ফালাহ: ১/১২১)

৬.  বিনা কারণে কাশি দেওয়া। (ফতোয়ায়ে শামি: ৩/৬১৮; মারাকিল ফালাহ: ১/১২১; আল বাহরুর রায়েক: ২/৫)

৭.  আমলে কাসির করা। ফিকাহবিদরা আমলে কাসিরের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তার মধ্যে বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য অভিমত হলো, কোনো মুসল্লি এমন কাজে লিপ্ত হওয়া, যার কারণে দূর থেকে কেউ তাকে দেখলে তার মনে প্রবল ধারণা জন্মাবে যে ওই ব্যক্তি নামাজরত নয়। (ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ৩/৪৮৫; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬২৪-৬২৫; বায়েউস সানায়ে: ১/২৪১)

৮. দুনিয়াবি কোনো বিপদে কিংবা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা। (হাশিয়াতু তাহতাবি: ১/৩২৫; ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬১৯; নুরুল ইজাহ, পৃ-৬৮)

৯.  তিন তাসবিহ পরিমাণ সতর খুলে থাকা। নামাজি ব্যক্তির নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত শরীরের কোনো স্থান যদি তিন তাসবিহ পরিমাণ সময় অনাবৃত থাকে, তাহলে তার নামাজ ভেঙে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/২৭৩; কাফি: ১/২৩৮; মাওয়াহিবুল জলিল: ১/৩৯৮; মুগনিল মুহতাজ: ১/১৮৮, হাশিয়াতুত তাহতাবি: ১/৩৩৭)

উল্লেখ্য, নারীদের মাথাও সতর। কোনো কারণে মাথার ওড়না সরে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। (আবু দাউদ: ৬৪১; তিরমিজি: ৩৭৭; ইবনে মাজাহ: ৬৫৫)

১০. মুক্তাদি ছাড়া অন্য ব্যক্তির লোকমা (ভুল সংশোধন) গ্রহণ করা। যেমন—ইমাম সাহেব কেরাতে ভুল করছেন, সঙ্গে সঙ্গে নামাজের বাইরের কোনো লোক লোকমা দিলে তা গ্রহণ করা। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬২২; হিন্দিয়া: ১/৯৮)

১১. সুসংবাদ বা দুঃসংবাদের প্রতি-উত্তর করা। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬১৩; আল বাহরুর রায়েক: ২/২)

১২. অপবিত্র জায়গায় সেজদা করা। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১১৫; আল বাহরুর রায়েক: ২/৩৭; তাবয়িনুল হাকায়েক: ১/৯৫)

১৩. কেবলার দিক থেকে সিনা (বুক) ঘুরে যাওয়া। তবে অপারগতাবশত যানবাহনে নামাজের ক্ষেত্রে মাসয়ালা ভিন্ন। (মারাকিল ফালাহ: ১/১২১; নুরুল ইজাহ: ১/৬৮)

১৪. নামাজে কোরআন শরিফ দেখে পড়া। (মারাকিল ফালাহ: ১/১২৪; হাশিয়াতুত তাহতাবি: ১/৩৩৬)

তবে সৌদি আরবের আলেমরা এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে ভিন্নমত পোষণ করেন।

১৫. নামাজে শব্দ করে হাসা। (কানজুদ্দাকায়েক: ১/১৪০)

১৬. নামাজে সাংসারিক (দুনিয়াবি) কোনো বিষয় প্রার্থনা করা। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৬১৯; আল বাহরুর রায়েক: ২/৩)। তবে এ মাসয়ালার ক্ষেত্রে অন্য মাজহাবের ভিন্নমত আছে।

১৭. হাঁচির জবাব দেওয়া। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/১১৭)

১৮. নামাজরত অবস্থায় খাওয়া ও পান করা। (মারাকিল ফালাহ: ১/১২১; নুরুল ইজাহ: ১/৬৮)

১৯. ইমামের আগে মুক্তাদি দাঁড়ানো। মুক্তাদির পায়ের গোড়ালি ইমামের আগে চলে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। তবে যদি (দুজনের জামাতে নামাজের ক্ষেত্রে) মুক্তাদি ইমামের পায়ের গোড়ালির পেছনেই দাঁড়ায়; কিন্তু তিনি লম্বা হওয়ার কারণে তাঁর সিজদা ইমাম সাহেবকে অতিক্রম করে যায়, তাহলে তাঁর নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ১/১৫৯, আল মাবসুত লিস সারাখসি: ১/৪৩)

উল্লেখিত ১৯টির বাইরেও নামাজ ভঙ্গের আরো কারণ আছে। যেমন—কোনো প্রাপ্তবয়স্ক নারী পাশে এসে নামাজে দাঁড়িয়ে যাওয়া, ইমামের আগে কোনো রোকন আদায় করে ফেলা, ইচ্ছাকৃত অজু ভাঙার মতো কোনো কাজ করে ফেলা, পাগল, মাতাল কিংবা অচেতন হয়ে যাওয়া ইত্যাদিও নামাজ ভঙ্গের কারণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সহিহ-শুদ্ধভাবে নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। নামাজে অসাবধানতা ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।