খুলনা | শুক্রবার | ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

‘সর্বত্রই নৈতিক অধঃপতন’

এড. এম মাফতুন আহমেদ |
০১:১৩ এ.এম | ৩১ জানুয়ারী ২০২৪


প্রত্যেক পেশা এখন জরাক্লিষ্ট। কমবেশী সবাই পেশার সাথে জড়িত। তাই আমরা সবাই পেশাজীবী। নৈতিকতার সাথে কেউ কী অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন? মনে হয় না। কতজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী সততা, নিষ্ঠা এবং নির্মোহতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন বা করছেন?  করছেন যে তা নয়, তবে তার সংখ্যা অতি নগণ্য।
রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে দলবাজীর নামে দলীয় দায়িত্ব পালনের অভিযোগ রয়েছে অনেকের বিরুদ্ধে বেশুমার। দলবাজি না করেও নাকি উপায় নেই। কতটুকু সত্য জানি না। পরিস্থিতি মনে হয় অনেককে বাধ্য করছে।
নৈতিকতার যখন অধঃপতন ঘটে পেশার তখন বদল ঘটে। নীতি নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। বিবেক তখন আড়ষ্ট হয়। ঘাট তখন আঘাট হয়। অপেশাজীবীদের দখলে প্রকৃত পেশা চলে যায়।
সাংবাদিকের হাতে সংবাদপত্র নেই। চাল-ডাল ব্যাপারীদের হাতে চলে গেছে এ পেশা। এক কথায় বলা যায় চ্যান্স সম্পাদকের আদিখ্যেতা এখন বেশী। গোকুলের ষাঁড় ব-কলম হকার এখন বড় সাংবাদিক! সাংবাদিক সেজে গাড়িতে “সাংবাদিক” নেমপ্লেট লাগিয়ে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ অনেকের বিরুদ্ধে।
কাকে কী বলবেন? দেশের প্রচলিত আইন, প্রশাসন এদের কথা শুনে; উঠে-আর বসে। ক্ষমতার দম্ভে মধুর আশায় সর্বত্রই এরা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।
প্রকৃত আইনজীবীদের হাতে আইন পেশা নেই। আইন চর্চা অনেক আগেই উঠে গিয়েছে। আইন পেশার পরিবর্তে সহজ পেশা কমিশন বাণিজ্য। একশ্রেণির আইনজীবী মধ্যস্বত্বভোগী দালাল, কথিত দুর্নীতিবাজ পেশকারদের মুখ চেয়ে থাকে তীর্থের কাকের মতো। কখন আসে মামলা।
এখন আর চেম্বার করা লাগে না। পড়াশুনার প্রশ্নই আসে না। কোর্ট বারান্দায় দিবা-নিশি ঘুরলে মোটামুটি একভাবে পেট চলে। এসব মেধাহীন আইনজীবীদের সংখ্যাধিক্য বেড়েই চলেছে। আইন পেশার পবিত্রতা নষ্ট হচ্ছে।
এক সময় মেধাবী, উচ্চ শিক্ষিত, আত্মত্যাগী বিশ্বাসী, পরিশ্রমী, শিক্ষিত, মার্জিত ব্যক্তিত্ববানরা শিক্ষকতাকে মহান পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। তাঁরা ছিলেন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার কাছে নমস্য ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। তাঁদের বলা হতো সত্যের সাধক, একজন মহষি, জ্ঞানের পূজারি। অনুপম সৃষ্টিশীল মানুষ গড়ার নিপূণ কারিগর।
সৎ পেশার মধ্যে সব’চে একটি পেশা ছিল শিক্ষকতা পেশা। প্রকৃত অর্থে তারা ছিলেন মানুষ গড়ার সফল কারিগর। সেই মহৎ পেশায় এখন কারা আসছে?
অধিকাংশ জুলুমবাজ। একথা ভুলে গেলে চলবে না একটি জাতির উন্নতি, অগ্রগতি, সুনাম ও অর্জন নির্ভর করে শিক্ষকের মানের ওপর। যে দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষকের মান যত বেশি উন্নত সেই দেশ তত উন্নত। দুর্ভাগ্য! কথায় বলে বনের শিয়াল যদি পণ্ডিত হয় যা হবার তাই হয়।
তারা শিক্ষকতার নামে কোচিং বাণিজ্য খুলে বসেছে। লেখাপড়া লবঢংক। মাস গেলে অসহায় অভিভাবককে মোটা অংকের টাকা গুণতে হয়। অভিভাবকদের পকেট কেটে বিত্ত  বৈভবের মালিক হচ্ছে তথাকথিত এসব শিক্ষকরা। সমাজের কাছে শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলছে। শিক্ষকদের যদি নৈতিক অধঃপতন ঘটে তাহলে কিভাবে একটি আদর্শিক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে উঠবে? এবার ভেবে দেখুনতো। তাই বলি সব জায়গায় ধস নেমেছে। নৈতিক অঅধঃপতন ঘটেছে। শরীরের শুধু মলম  লাগিয়ে কাজ হবে না । পরিত্রাণের উপায় বের করতে হবে।  
লেখক : কলামিস্ট ও সম্পাদক, আজাদ বার্তা।