খুলনা | শনিবার | ১২ অক্টোবর ২০২৪ | ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

পাইকগাছায় বর্বরতা : চোখে সুপার গ্লু ও মুখে টেপ লাগিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও পাইকগাছা প্রতিনিধি |
০৩:০০ পি.এম | ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪


খুলনার পাইকগাছায় গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে চোখে সুপার গ্লু ও মুখে টেপ লাগিয়ে এক গৃহবধূকে (৪৫) গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তার উপর অমানবিক নির্যাতনও করা হয়। উপজেলার রাড়–লী গ্রামে রোববার মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। সোমবার আহত মহিলাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলে (ওসিসি) ভর্তি করেছে স্বজনরা।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী কাঁচামালের ব্যবসা করেন। রোববার রাতে তিনি বাড়ির বাইরে ছিলেন। পড়ালেখার জন্য ছেলে-মেয়ে বাইরে থাকে। রোববার গভীর রাতে কয়েকজন লোক মই দিয়ে ওই বাড়ির ছাদে ওঠে। তারপর সিঁড়ির দরজা ভেঙে গৃহবধূর কক্ষে প্রবেশ করে। স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে থাকায় তখন বাড়িতে একা ছিলেন গৃহবধূ। দুর্বৃত্তরা তার হাত-পা বেঁধে, চোখে সুপার গ্লু বা এ ধরনের কোনো আঠা এবং মুখে টেপ লাগিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর আঘাত করে, কান থেকে স্বর্ণের দুল ছিঁড়ে নিয়ে যায়। ভোরের দিকে গৃহবধূর গোঙানি শুনে আশপাশের লোকজন এসে তার স্বামীকে খবর দেন। এরপর তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 
ওই নারীর ছেলে বলেন, বাড়ি থেকে এক জোড়া সোনার দুল এবং আনুমানিক দুই লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ঘরের পাশের গাছ বেয়ে ছাদে উঠে ঘরে ঢুকে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। চিকিৎসার জন্য মাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর স্বামী বলেন, বিকেল ৩টার দিকে ব্যবসায়ীক কাজে গড়ইখালী বাজারে যাই। প্রতিবেশীরা ভোর রাত ৫টার দিকে আমাকে ফোন করে ঘটনা জানান।
তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে একাধিক ব্যক্তি আমার বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে আমার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতি করে তারা। তার চোখে আঠা দেওয়া ছিল এবং কান ছেঁড়া ছিল। আমার স্ত্রী কথা বলতে পারছে না। আমি দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
রাড়–লী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ জানান ঘটনাটা খুবই দুঃখজনক। আমি খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। 
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সুমন রায় বলেন, ‘ওই নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। এই মুহূর্তে তার মুখ ও চোখ রক্ষার জন্য অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার কনক হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী নারী যখন আসেন তার দুই চোখ আঠা দিয়ে লাগানো ছিল। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে গাইনি বিভাগে পাঠিয়েছি। এছাড়া চক্ষু বিভাগে তার চিকিৎসা করানো হয়েছে। বর্তমানে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। এখনও তিনি সুস্থ নন। আশা করছি, চিকিৎসা নেওয়ার পর তিনি স্বাভাবিক হতে পারবেন। 
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার ডি-সার্কেল মোঃ সাইফুল ইসলাম ও পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ ওবাইদুর রহমান জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি।
ওসি আরও জানান জানান, রাড়ুলী ইউনিয়নে একটি বাড়িতে সংঘবদ্ধ একটি চক্র বাড়িতে ঢুকে বাড়ির মালিক না থাকার সুযোগে চক্রটি ওই বাড়ির মহিলার চোখে সুপারগুলু আঠা লাগিয়ে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ধর্ষণ করে আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সার্কেল মোঃ সাইফুল ইসলাম ও আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায় তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে সংঘবদ্ধ চক্রটি পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।