খুলনা | শনিবার | ০৫ জুলাই ২০২৫ | ২১ আষাঢ় ১৪৩২

পুলিশের চাকুরি ছেড়ে এলাকায় মাদক সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ

কেএমপিতে জাফর মোল্লা পরিচয়ে ১৪ বছর চাকুরি করে নড়াইলের কালিয়ার সাইফুল

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৮ এ.এম | ২৪ মার্চ ২০২৪


নড়াইলের কালিয়া উপজেলার ভোমবাগ গ্রামের এম সাইফুল ইসলাম খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে ১৪ বছর চাকুরি করেছেন মোঃ জাফর মোল্লা পরিচয়ে। স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার পর মোঃ জাফর মোল্লা পরিচয়েই অবসরকালীন রেশন-ভাতা উত্তোলন করছেন এম সাইফুল ইসলাম। আবার কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তিন সন্তানের মধ্যে দু’জনের শিক্ষাগত মূল সনদে এম সাইফুল ইসলাম থাকলেও একজনের সার্টিফিকেটে নাম এসেছে মোঃ জাফর মোল্লা। নিজের পরিচয় গোপন রেখে অন্যের শিক্ষা সনদে কেএমপিতে চাকুরি করে বেতন-ভাড়া এবং অবসরকালীন রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণকারী প্রতারক স্থানীয়দের কাছে সাইফুল মেম্বর নামেই পরিচিত। 
নিজের অপরাধ চাপা দিতেই এলাকায় গড়ে তুলেছেন অপরাধ জগত; মাদক বিকিকিনি থেকে এহেন অপকর্ম নেই যা করে না তার পোষ্য বাহিনী। প্রাণভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান সাধারণ মানুষ। অন্যের সার্টিফিকেটে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি করে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ, নামে-বেনামে প্রচুর অর্থ-সম্পত্তি গড়ে তোলা, এলাকায় সন্ত্রাসী ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণকারী সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজপি, রেঞ্জ ডিআইজিসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালের ১০ অক্টোবর নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বোমবাগ গ্রামের হাকিম মোল্লার ছেলে মোঃ জাফর মোল্যা (এনআইডি নং- ৫৫৩৫৬৯৪৯১২) পরিচয়ে কনস্টেবল পদে চাকরি নিয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে (কং নং-৫৪৮৩) যোগদান করেন এম সাইফুল ইসলাম (এনআইডি নং-৬৫১২৮২৩৩৩৩৫০৫)। একই এলাকার আঃ হাকিম বিশ্বাসের ছেলে তিনি। পরিচয় গোপন করে অন্যের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নেবার বিষয়টি জানাজানি হবার ভয়ে মেয়াদপূর্তির পূর্বেই ২০০১ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে (আর/সি নং ৩৬১) যান মোঃ জাফর মোল­া ওরফে এম সাইফুল ইসলাম। এলাকায় ফিরে এম সাইফুল ইসলাম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। একই সাথে মোঃ জাফর মোল­া পরিচয়ে পুলিশের অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন সাইফুল মেম্বর।
স্থানীয় বোমবাগ গ্রামের গোলাম মোল­ার মেয়ে রাবেয়া ওরফে মাবিয়া বলেন, ‘আমি যখন সিক্সে (৬ষ্ঠ শ্রেণিতে) পড়ি (২০০৫ সালে)। তখন ওই সাইফুল মেম্বর আমাকে অপহরণ করে নিয়ে ধর্ষণ করেছিল। আমি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের কাছে বিচার চাইলে, সে প্রভাবশালী হওয়ায় টাকা-পয়সা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে রাখে। আমি কোনো বিচার পাইনি। পরে পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আবার সাইফুল মেম্বর আমার কাছে আসতে চায়; আমি রাজি না হওয়ায় মাদকাসক্তদের সাথে নিয়ে রাতে নানাভাবে আমাকে মানসিক নির্যাতন করে। এখন সে আমার মেয়েকেও ধর্ষণের হুমকি দিচ্ছে! দুনিয়া কি কেউ নেই ওই ধর্ষকের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবে?”
জাফর মোল্লা পরিচয়ে পুলিশে চাকুরি বিষয়ে সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, “১৯৮৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত পুলিশের চাকুরি করছি, এটা সত্যি। আমি খুলনাতে বেড়াতে এসে অন্যের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরি নিয়েছিলাম, পরে আইজিপি মহোদয়কে জানিয়ে আদালতের মাধ্যমে এভিডেভিট করে নিয়েছিলাম। আইনগত ভাবেই আমি জাফর মোল্লা পরিচয়ের রেশন সুবিধা ভোগ করছি। এতে তো সমস্যার কিছুই নেই। আমার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ সঠিক নয়, সেনা বাহিনী দিয়ে এ ব্যাপারে বহু তদন্ত করানো হয়েছে-তারা প্রমাণ করতে পারিনি। আমার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে একজনের সার্টিফিকেটে পিতার নাম জাফর মোল্লা এসেছে, এটা তো দোষের কিছু না।” নির্বাচনে পরাজিত একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে মাদক সিন্ডিকেট, ধর্ষণ ও জাল-জালিয়াতির নানান অপপ্রচার চালানোর পাল্টা অভিযোগ করেছেন তিনি।