খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে

|
০২:১৮ এ.এম | ০৪ এপ্রিল ২০২৪


কয়েক বছর আগে বুয়েটে এক নৃশংস ঘটনার পর সেখানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকায় লাভবান হয়েছে উগ্রবাদী সংগঠনগুলো। রাজনৈতিক কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই তারা গোপন তৎপরতা চালিয়ে নিজেদের সংগঠিত করতে পারছে। এতে গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল রাজনীতির ক্ষতি হচ্ছে। বুয়েটে রাজনৈতিক সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন প্রতিটি আন্দোলনে সাফল্যের পেছনে রয়েছে ছাত্ররাজনীতির অবদান। কিন্তু পরবর্তীকালে নেতিবাচক ছাত্ররাজনীতির কারণে আমাদের শিক্ষাঙ্গণের পবিত্রতা নানাভাবেই কলুষিত হচ্ছে। শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির ফাঁদে পড়ে সম্ভাবনাময় অনেক তরুণ শিক্ষার পথ থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তারা নিজের জীবন তো ধ্বংস করছেই, দরিদ্র মা-বাবার স্বপ্নকে হত্যা করছে; পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে সামাজিক গ্লানির দিকে। ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে বহু শিক্ষার্থী প্রতিবছর প্রাণ হারায়।
ছাত্র আন্দোলনের সঠিক সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক যাত্রাপথকে সঠিক পথ দেখাতে পেরেছিল, যদিও নেতারা সেই শুদ্ধতা ধরে রাখতে পারেননি। ছাত্র আন্দোলন ষাটের দশকের শেষাবধি দুঃশাসনবিরোধী প্রতিবাদী ধারা প্রবল শক্তিতে ধরে রাখতে পেরেছিল এবং দেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
স্বাধীন বাংলাদেশে সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবেশ ছাত্ররাজনীতিকেও দূষিত, নীতিভ্রষ্ট ও বিষাক্ত করে। আদর্শের বদলে বিত্তবৈভবের প্রবল আকর্ষণ নীতিচ্যুত করে। দুই সামরিক শাসক মেধাবী ছাত্রদের একাংশকেও কাছে টেনে নিতে সক্ষম হয়। তাদের হাতে সহপাঠী বা মানুষ হত্যার রক্তের ছাপ।
ডাকসুর সোনালি যুগের, কি জাতীয়তাবাদী, কি প্রগতিবাদী ছাত্ররাজনীতির জায়গা দখল করেছে এমন এক নৃশংস রাজনীতি। এই অবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। পূর্ব ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে আপৎকালীন জাতীয় সমস্যা নিয়ে ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীন রাজনীতি করবে; যেখানে থাকবে আদর্শ, ন্যায়নীতি, নৈতিকতা ও সুস্থ মানবিক মূল্যবোধ। শিক্ষায়তনের পরিবেশ সুস্থ, মানবিক ও পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পড়াশোনার পাশাপাশি প্রয়োজন সুস্থ ধারার ছাত্ররাজনীতি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে ছাত্ররাজনীতি র‌্যাগিং কালচারকে প্রশ্রয় দেয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের পথ খুলে দেয়, যার বলি হতে হয় নিরীহ ছাত্রদের, তা কখনো ভালো কিছু বয়ে আনেনি। তাঁরা মনে করেন, ছাত্ররাজনীতির নামে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে এবং নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির ওপর যে বাধা সেটা অপসারণ করে দিতে হবে। ছাত্ররাজনীতির নামে শিক্ষার পরিবেশে বিঘœ ঘটে এমন কোনো কার্যক্রম মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ছাত্রনেতৃত্বে আসবে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্ররা। দেশ ও দশের স্বার্থেই ছাত্ররাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে হবে। সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে।