খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পে নির্মিত তিনতলা ভবন হবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশ্রয়স্থল

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:১৩ এ.এম | ০৭ মে ২০২৪


প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবল থেকে উপক‚লীয় অঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে আগলে রাখে অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি সুন্দরবন। ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াসে সুন্দরবনের অতন্ত্র প্রহরীরা থাকেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পে নির্মিত তিনতলা টহল ফাঁড়ি ভবন আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হবে বনরক্ষী ও বনজীবীদের। সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের হায়াতখালী ও বজবজা টহল ফাঁড়ি দু’টি গেল ২০২২-২৩ অর্থবছরে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে; আর চলতি অর্থ বছরে খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান স্টেশন, হড্ডা, শরবতখালী, শাকবাড়িয়া ও পাশাখালী এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি নির্মাণ কাজ চলছে। বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই ভবন হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন সুন্দরবনে দায়িত্বরত বনরক্ষীরা।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পটি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়। এটির কাজ শেষ হবে আগামী বছরের ডিসেম্বরে। এই প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ১৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের প্রধান কাজ হচ্ছে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বনবিভাগের ২৮টি নতুন ক্যাম্প ও দু’টি রেঞ্জ অফিস নির্মাণ। এছাড়া সুন্দরবনের আশপাশের লোকালয়ে বনবিভাগের যে সব জায়গা রয়েছে- ম্যানগ্রোভ বনায়ন করা। পাশাপাশি সুন্দরবন সংলগ্ন ভরাট হয়ে যাওয়া ভোলা ও আড়ুয়াবেড় নদী এবং খরমা খাল পুনঃখনন করা হবে। এর পাশাপাশি সুন্দরবন কেন্দ্রীক কিছু গবেষণা ও জরিপ কাজ এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বজবজা টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান ও হায়াতখালী টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ মুক্তাদির রহমান বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের ত্রিতল অফিস কাম স্টাফ ব্যারাকের মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগকালে দায়িত্বরত বনরক্ষীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়েছে। টেকসই-মজবুত ইমারত নির্মাণে যেমন নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, তেমনি বনরক্ষীদের মধ্যে কর্মস্পৃহা দৃঢ় হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের নলিয়ান স্টেশন, হড্ডা, শরবতখালী, শাকবাড়িয়া ও পাশাখালী এবং সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ির ইনচার্জরা বলছেন, তাদের তিনতলা ভবনের কাজ সঠিকভাবেই চলমান। তবে আগামী বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই সম্পন্নের দাবি তাদের। রেকর্ড পরিমাণ তাপমাত্রার পর নিশ্চিয়ই মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ¡াসের আশঙ্কা থেকেই যায়।
সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগ খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, বনরক্ষীদের দীর্ঘদিনের আবাসন সমস্যার সমাধান হল। নিরাপত্তাহীনতা ঘুচে গেল। সুন্দরবনে কখনোই ইকোলজিক্যাল মনিটরিং ব্যবস্থা ছিল না। সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দরবনের গাছ-গাছালী, পশু-পাখি, পানির লবনাক্ততা ও জলজপ্রাণি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা সম্ভব হবে। সিইজিআইএস এবং আরণ্যক ফাউন্ডেশন নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান এগুলো নিয়ে দুই বছর মেয়াদী কাজ করছে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে গবেষণালব্ধ তথ্য জানতে পারবে দেশবাসী।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনের প্রাণি ও উদ্ভিদ বড় বৈচিত্র্যময়। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই সুন্দরবনের সুরক্ষা ও বনের জলবায়ু পরিবর্তন, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, সুন্দরী গাছের আগামরা রোগ নির্ণয়, বনের প্রাণি ও উদ্ভিদকুল এবং জলজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য, সুন্দরী গাছের আগামরা রোগের কারণ নির্ণয় এবং প্রাণিকুলের জীবনচক্র ও জলজসম্পদ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে।
সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ সম্পদ নিয়ে বহুমাত্রিক ও সমন্বিতভাবে গবেষণা করা প্রয়োজন। গবেষণার পাশাপাশি সুন্দরবন সুরক্ষার ওপর বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আমরা সরকারের কাছে সুন্দরবনের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় করার দাবি জানিয়ে আাসছি।