খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

‘শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর টুকরো টুকরো করা হয় দেহ। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তরা’

আনোয়ারুল হত্যা : গ্রেফতার ‘কসাই জিহাদ’ ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতে

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৬ এ.এম | ২৫ মে ২০২৪


বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম (আনার) হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদারের ১২ দিনের সিআইডি হেফাজতের আদেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের আদালত। শুক্রবার বারাসত আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভঙ্কর বিশ্বাস এই আদেশ দেন। গতকাল দুপুরে মুম্বাই থেকে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদারকে আদালতে তোলেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। সিআইডিই জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেফতার করে। জিহাদ পেশায় কসাই।
এর আগে সিআইডির পক্ষ থেকে জিহাদ হাওলাদারকে গ্রেফতারের বিষয়টি জানানো হয়। সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, গ্রেফতার জিহাদের বয়স ২৪ বছর। তিনি মুম্বাইয়ের অবৈধ অভিবাসী। তাঁর বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। বাড়ি খুলনার দিঘলিয়ায়।
এদিকে খুলনায় খবর নিয়ে জানা যায়, ভারতে গ্রেফতার জিহাদ হাওলাদার সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যার ঘটনায় ভাড়া করা খুনি কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিমুল ভূঁইয়ার সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
বৃহস্পতিবার ভারতের পুলিশ এ হত্যার ঘটনায় সিয়াম নামের একজনকে গ্রেফতারের কথা বলেছিল। তবে সিয়াম এখন কাঠমান্ডুতে বলে জানা গেছে। আসলে জিহাদ হাওলাদারকেই তাঁরা সিয়াম বলে মনে করেছিল।
সিআইডির বার্তায় বলা হয়েছে, হত্যার ঘটনার দুই মাস আগে কসাই জিহাদ হাওলাদারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন মোঃ আক্তারুজ্জামান। এই আক্তারুজ্জামানকেই সংসদ সদস্য আজীম হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কলকাতার নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে, সেটি এই আক্তারুজ্জামানের ভাড়া করা। তিনি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. সহিদুজ্জামানের ছোট ভাই। কলকাতা সিআইডি বলছে, গ্রেফতার জিহাদ স্বীকার করেছেন, আক্তারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি এবং চার বাংলাদেশি মিলে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করেন।
আজ বেলা একটার দিকে জিহাদকে বারাসাতের আদালতে নিয়ে আসেন সিআইডির কর্মকর্তারা। আদালতে তোলার পর তাঁর হেফাজতের আবেদন করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ছিলেন শান্তময় বসু। হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক শুভঙ্কর বিশ্বাস।
রিমান্ড আবেদনে সিআইডির পক্ষ থেকে বলা হয়, গোয়েন্দারা এখনও নিহত সাংসদের কোনও দেহাংশ খুঁজে পাননি। ফলে গ্রেফতারদের জেরা করে যা তথ্য মিলেছে, তার ওপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে তদন্তকারীদের। এ ক্ষেত্রে, অভিযুক্তেরা কোনও ভাবে তদন্তকারীদের ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সেই সূত্রেই জিহাদকে ১৪ দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।
সিআইডি সূত্রে খবর, হানিট্র্যাপের শিকার হয়েছিলেন বাংলাদেশের সংসদ সদস্য। শিলাস্তি রহমান নামের এক নারীকে সামনে রেখে তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছিল, নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতার নিউ টাউনের ওই আবাসনে। তার পর সেখানে আনোয়ারুল আজিমকে খুন করা হয়। গ্রেফতার জিহাদের বিরুদ্ধে খুনের জন্য অপহরণ, তথ্য নষ্ট করা, ভুল তথ্য দেওয়া, খুন এবং অপরাধের চক্রান্ত করার ধারা যোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এই ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। সেই তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিআইডির একটি দল বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা জিহাদ হওলাদার অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে থাকতেন। খুনের অন্তত ২ মাস আগে তাকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় আনা হয়েছিল।
জেরার মুশে জিহাদ স্বীকার করেছেন, প্রথমে আনোয়ারুল আজীমকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করা হয়। তার পর দেহ কাটা হয় টুকরো টুকরো করে। হাড় এবং মাংস আলাদা করা হয়। চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে তাতে হলুদ মাখান অভিযুক্তেরা। যাতে বাইরে কেউ জিজ্ঞেস করলে বলা যায়, রান্না করার জন্য মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। 
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। আট দিন নিখোঁজ থাকার পর গত বুধবার তাঁর খুন হওয়ার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত করে। কলকাতা পুলিশের ধারণা, ঘাতকদের কোনো একজনের পরিচিত শিলাস্তিকে ব্যবহার করে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলকে ফাঁদে ফেলা হতে পারে। 
সূত্র : বিবিসি, আনন্দবাজার ও প্রথম আলো অনলাইন।