খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার : পাল্টে যাচ্ছে আক্রমণ ও প্রতিরোধের সমীকরণ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৫০ এ.এম | ১৪ জুন ২০২৪


মিয়ানমারের প্রতিরোধ যোদ্ধারা গত বছর দেশের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ভয়ঙ্কর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা ড্রোন বহরের ওপর নির্ভর করে উলে­খযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল। কিন্তু এখন, যুদ্ধে ড্রোন ব্যবহারের কৌশল পাল্টে যাচ্ছে। দেশটির শাসক জান্তা ক্রমবর্ধমানভাবে চীনা তৈরি বাণিজ্যিক ড্রোনগুলোকে অস্ত্রে রূপান্তর করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তা ইয়োকে গিয়ি নামে পরিচিত ৩১ বছর বয়সী একজন বিদ্রোহী যোদ্ধা জানান, বছরের শুরু থেকে সশস্ত্র ড্রোন ব্যবহার শুরু করেছে মিয়ানমার জান্তা। স¤প্রতি তার দল একটি ড্রোন ভূপাতিত করে, যার যন্ত্রাংশগুলো থেকে তারা বুঝতে পেরেছেন এটি চীনা যন্ত্রাংশে তৈরি এবং যুদ্ধের জন্য রূপান্তরিত করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, তাদের বাহিনীর কিছু যোদ্ধা এই ড্রোনের আক্রমণে আহত হয়েছে। একই ধরনের ড্রোন হামলা সম্পর্কে মিয়ানমারের অপর অংশের বিদ্রোহী যোদ্ধারাও কথা বলেছেন।
গৃহযুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার সম্পর্কে প্রতিরোধ যোদ্ধা, বিশ্লেষক এবং একটি আঞ্চলিক দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জান্তা স্থানীয়ভাবে তৈরি বোমা ফেলতে চীনা বাণিজ্যিক ড্রোনগুলো ব্যবহার করছে। তবে, জান্তা মুখপাত্র এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।
বিদ্রোহী তা ইয়োক গিয়ি একসময় দূরপাল­ার বাসচালক ছিলেন। তবে ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর, জান্তার দমন-পীড়নে ক্ষুব্ধ হয়ে হাজার হাজার যুবকের মতো অস্ত্র হাতে তুলে নেন। তার নেতৃত্বাধীন অ্যাংরি বার্ড ড্রোন রেঞ্জার্স নামের একটি ইউনিট প্রথমদিকে চীনা ডিজিআই ড্রোন ব্যবহার করে টহল অভিযান পরিচালনা করত। পরবর্তীতে তারা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বোমা বহন করতে পারে এমন ড্রোন তৈরি করতে সক্ষম হয়।
মিয়ানমার ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড সিকিউরিটির নির্বাহী পরিচালক মি ঝাও উ বলেছেন, মিয়ানমার জান্তা হাজার হাজার চীনা বাণিজ্যিক ড্রোন সংগ্রহ করেছে এবং সেগুলোকে স্থানীয়ভাবে তৈরি অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অস্ত্র স্থানান্তর ডাটাবেজের তথ্য অনুসারে, চীনের কাছ ১২টি সশস্ত্র ড্রোন ক্রয়ের আদেশ দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
বিদ্রোহীরা জানিয়েছেন, আক্রমণ অভিযানে এসব সামরিক ড্রোন ব্যবহার করছে না সেনাবাহিনী। এর বদলে বাণিজ্যিক ড্রোনকে সশস্ত্র করে তারা ব্যবহার করছে। ‘অপারেশন ১০২৭’-এর সময় তিন জাতিগোষ্ঠীর বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ড্রোন আক্রমণের পর থেকেই জান্তার সেনাবাহিনী আরও ড্রোন ব্যবহার করতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারে ড্রোন যুদ্ধের এই নতুন প্রবণতা গৃহযুদ্ধের গতিপথকে প্রভাবিত করতে পারে। বিদ্রোহীরা ড্রোন ব্যবহারে তাদের প্রাথমিক সুবিধা হারিয়েছে। এখন উভয় পক্ষই ড্রোন ব্যবহার করছে। চলমান গৃহযুদ্ধের ভবিষ্যৎ অজানা থাকলেও তা নির্ধারণে এসব ড্রোন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।