মুমিন বান্দার জীবনে পবিত্র ঈদুল আযহা এবং কোরবানির গুরুত্ব সীমাহীন। কারণ মুমিনের জীবনের একমাত্র আরাধনা মহান আল­াহর নৈকট্য লাভ করা। আর প্রকৃত কোরবানি তাকে অত্যন্ত দ্রুত আল­াহর নৈকট্যে ভূষিত করে। আমরা বাঙালী কোরবানির ঈদ বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। কোরবানি শব্দের অর্থ নৈকট্য, ত্যাগ, উৎসর্গ। অর্থাৎ আল­াহতায়ালার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যেই এ কোরবানি। 
কোরবানির ঈদ-পালনের মাধ্যমে বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ আল­াহর প্রিয় বান্দা ও নবী হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও হযরত ইসমাইল (আঃ) এর অতুলনীয় আনুগত্য এবং মহান ত্যাগের পুণ্যময় স্মৃতি বহন করে। আল­াহপাকের সন্তুষ্টির জন্য মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর পশু কোরবানি করে থাকে।
মহান আল­াহ পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়–ন এবং কোরবানি করুন’ (সুরা কাউসার, আয়াত ২)। 
পশু কোরবানি একটি প্রতীকি ব্যাপার। এখানে পশু কোরবানির মাধ্যমে মুসলমানরা আল­াহর সন্তুষ্টির জন্য জানমাল থেকে শুরু করে সবকিছুই কোরবানি করতে প্রস্তুত। হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তার পুরো পরিবারের নজিরবিহীন কোরবানির ইতিহাস মানুষকে যে ত্যাগের শিক্ষা দেয় তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে একজন মুমিন তার সবকিছুই আল­াহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করতে সদা প্রস্তুত থাকে।
হজরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) এবং মা হাজেরার আল­াহর প্রতি গভীর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশগুলো আল­াহতায়ালা হজের অংশ হিসেবে গণ্য করেছেন।
আল­াহতায়ালা হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কে স্বপ্নে দেখালেন, তিনি তার পুত্রকে জবাহ করছেন (সুরা সাফ)। পিতা ইব্রাহিম স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গেলে আল­াহ বললেন, হে ইব্রাহিম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছো। আমি তোমাকে নিজ পুত্রকে আমার পথে উৎসর্গ করতে বলেছি, হত্যা করতে নয়। তোমার পুত্র সারাজীন লোকদেরকে বুঝাবে আল­াহ এক-অদ্বিতীয়। প্রশ্ন হলো, তাহলে কেন দুম্বা বা ছাগল জবাই করলেন? এর উত্তর হলো: যদি সেদিন এই ঘটনা না ঘটতো তাহলে তৎকালীন ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী কোন কোন জাতিতে প্রভুকে বা দেব-দেবীদেরকে খুশি করার জন্য নরবলী তথা মানুষ কোরবানি চলমান থাকতো। অতএব আল­াহ মানবজাতিকে শিক্ষা দিলেন, মানুষ জবাহ করার জিনিস নয়, জবাহ যদি করতে হয় তাহলে পশু জবাহ করো।
ইতিহাস পাঠে জানা যায়, হযরত রসুলে পাক (সাঃ) এর শ্রদ্ধেয় পিতা একবার অসুস্থ হলে তার দাদা একশ’ উট জবাহ করেছিলেন (সিরাতে নববী)। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, পশু জবাই করা রসূল (সাঃ) প্রচলন করেননি বরং পূর্বেই আল­াহর সন্তুষ্টির জন্য পশু জবাই করা হতো।
মূল উদ্দেশ্য হলো, হৃদয়েও যদি কোন পশু সূলভ আচরণ থাকে সেই পশুত্বকে হত্যা করতে হবে, সেটাকে জবাই করতে হবে। হাদিসে আছে, পশু জবাই খোদা তা’লার নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম তবে তা ঐ ব্যক্তির জন্য যে নিষ্ঠার সাথে কেবল আল­াহতায়ালার ভালোবাসায়, তার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে ঈমান সহকারে পশু জবাই করে এমন কোরবানিকে আরবিতে ‘নুসক’ বলা হয়েছে, যার আরেকটি অর্থ অনুগত।
আত্মত্যাগের মহিমায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যারা আল­াহর নামে কোরবানি করে তাদের জন্য সীমাহীন সওয়াবের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন রসূলুল­াহ (সাঃ)।
হজরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাঃ) মদীনায় ১০ বছর অবস্থান করেছেন এবং বরাবর কোরবানি করেছেন (তিরমিজি)।
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কোরবানির দিনে কোরবানি করাই সবচেয়ে বড় ইবাদত। কোরবানির জন্তুর শরীরের প্রতিটি পশমের বিনিময়ে কোরবানিদাতাকে একটি করে সওয়াব দান করা হবে। কোরবানির পশুর রক্ত জবাই করার সময় মাটিতে পড়ার আগেই তা আল­াহর দরবারে কবুল হয়ে যায় (মেশকাত)।
কোরবানির বিনিময়ে সওয়াব পেতে হলে অবশ্যই কোরবানিটা হতে হবে একমাত্র আল­াহর উদ্দেশ্যে।
আল­াহপাকের দরবারে আমাদের প্রার্থনা, হে আল­াহ! আমাদের এ কোরবানি তুমি গ্রহণ কর আর আমাদের আত্মাকে পবিত্র কর, আমিন।