খুলনা | বুধবার | ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৭ কার্তিক ১৪৩১

দুই উপ-পরিচালক ও আবেদ আলীসহ ৭ আসামির স্বীকারোক্তি, সিয়ামসহ ১০ জন কারাগারে :

প্রশ্নফাঁস চক্রের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ

খবর প্রতিবেদন |
১০:৫৭ পি.এম | ০৯ জুলাই ২০২৪


প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দু’জন উপ-পরিচালক ও সাবেক গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ গ্রেফতার ১৭ জনের মধ্যে সাতজন দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া অন্য আসামিরা হলেন পিএসসি’র ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মোঃ সোহেল, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন।
পিএসসির প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ গ্রেফতার ১৭ আসামিকে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। পরে বিকেল ৩টার দিকে ঢাকার পৃথক সাতটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাদের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
অন্যদিকে মামলায় গ্রেফতার অপর ১০ আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। পরে ১০ আসামির জামিন চেয়ে আবেদন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ১০ আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন পিএসসি’র উপ-পরিচালক মোঃ আবু জাফর ও মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর কবির, সাবেক সেনা সদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মোঃ জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মোঃ মামুনুর রশীদ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মোঃ নিয়ামুল হাসান ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।
এর আগে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামিদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচারকের খাস কামরায় তোলা হয়। সিআইডি কালো রঙের একটি গাড়িতে করে তাদের আদালতের ফটকের সামনে পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের দ্রুত বিচারকের খাস কামরার দিকে নিয়ে যায় সিআইডি একটি দল।
এর আগে রোববার পিএসসির দুই উপ-পরিচালক মোঃ আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মোঃ আলমগীর কবিরসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক ভাইরাল হওয়া সৈয়দ আবেদ আলী ও তার ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও রয়েছেন গ্রেফতার ব্যক্তিদের তালিকায়। গ্রেফতার অন্য অভিযুক্তরা হলেন  পিএসসির ডেসপ্যাচ রাইটার খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মোঃ সোহেল, ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের মামুনুর রশীদ, ব্যবসায়ী দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন, বেকার যুবক লিটন সরকার, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাকর্মী শাহাদাত হোসেন ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান নিয়ামুন হাসান।
ব্যাংক হিসাব জব্দ : পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক আবেদ আলীসহ প্রশ্নফাঁস চক্রের ১৭ সদস্যের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 
সাবেক সহকারী পরিচালকসহ ১৪ জন পলাতক : পিএসসির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের মামলায় প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়সহ ১৪ জন পলাতক রয়েছে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে।
পলাতক অন্য আসামিরা হলেন শরীফুল ইসলাম ভূঁইয়া, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মোঃ সুমন, এ কে এম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মুহা. মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।
এর আগে গত সোমবার পিএসসির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে রাজধানীর পল্টন থানায় পুলিশ এ মামলা করে। এর আগে রোববার দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। মামলায় আরও ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
উলে­খ্য, ‘বিসিএস প্রিলি-লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে চ্যানেল টোয়েন্টিফোর গত রোববার এক প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনে পিএসসির ক্যাডার ও নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ আনা হয়।
সর্বশেষ গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত রেলওয়ের ৫১৬টি পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল­খ করা হয়। একটি চক্র এক যুগের বেশি সময় ধরে বিসিএসসহ ৩০টি ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে যুক্ত বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিসিএস ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আলোচনায় আসার পর পিএসসির দুই উপ-পরিচালক ও গাড়ি চালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
উলে­খ্য, প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে সোমবার দিনভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আবেদ আলীসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় ওইদিন রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে সিআইডির উপ-পরিদর্শক নিপ্পন চন্দ্র চন্দ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় ৩১ জনের নাম উলে­খসহ অজ্ঞাত পরিচয় ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।