খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

অমুসলিমদের প্রতি মুসলিমদের করণীয় (পর্ব-১)

ড. মুহাম্মদ বেলায়েত হুসাইন |
১১:১৩ পি.এম | ২৮ জুলাই ২০২৪


অমুসলিম বলতে সকল অবিশ্বাসীদেরকেই বুঝানো হয়ে থাকে অর্থাৎ যারা মহান আল্লাহ তা’য়ালার একাত্ববাদ ও রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যতের উপর বিশ্বাসী নয় তাদেরকে অবিশ্বাসী বা অমুসলিম বলা হয়।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। তাঁর সমকক্ষ আর কিছুই নেই! তিনি চিরঞ্জীব। এই বিশ্বব্রহ্মান্ড ও এর মাঝে যা কিছু আছে তিনি তা একাই সৃষ্টি করেছেন এবং একাই পরিচালিত করেন এবং এই পরিচালনার ব্যাপারে তাঁর কারো সাহায্য গ্রহণের প্রয়োজন হয়না। তিনি সূর্যকে পূর্ব দিক হতে উদিত করেন ও পশ্চিম দিকে অস্তমিত করেন। তিনি দিন ও রাত আনয়ন করেন। তিনি সকল জীবের খাদ্য দান করেন। তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। আর সকল সৃষ্টির সফলতা একমাত্র তার কুদরতি হাতের ভিতরেই। তিনি যাকে ইচ্ছা সফলতা দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা নাস্তানাবুদ করেন। তিনিই মানব জাতির হেদায়েত অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসেবে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। একজন মুসলমানের কাছে নিজের জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণ হল আল্লাহর একাত্ববাদে ও রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যতের উপর বিশ্বাসী হওয়া, হিদায়াত বা সুপথ প্রাপ্ত হওয়া। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একজন মুসলমান মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহর একত্ববাদে ও রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যতের উপর বিশ্বাসী হওয়া ছাড়া অন্য সকল মানুষ পথহারা। কাজেই তাদেরকে পথ দেখিয়ে দেয়া অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ ও রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়্যতের প্রতি আহবান করাকে সে নিজের প্রধান দায়িত্ব জ্ঞান করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ইসলামের পথ ছাড়া অন্য সকল পথ কণ্টকময়।
পথহারা ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণ যেমন সঠিক পথ পেয়ে যাওয়া, তেমনি অন্য ধর্মের কারো জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণ হলো তাকে ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসা, তাকে সুপথ প্রাপ্ত করা। একজন মুসলমানের বিশ্বাস এমনই। কাজেই, একজন মুসলমানের পক্ষ হতে একজন অমুসলিমের জন্য সবচেয়ে বড় কল্যাণ কামনা হচ্ছে তার হিদায়াত।
এক ছিল ইয়াহুদী বালক। মাঝে মাঝেই আসত রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে। পরম শ্রদ্ধার সাথে সে সেবা করত আল্লাহর রাসূলের। হঠাৎ কয়েক দিন তার দেখা নেই। শত ব্যস্ততার মাঝেও কোন কিছুই যে নজর এড়ায় না আল্লাহর রাসূলের। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার খোঁজ করলেন। জানতে পারলেন সে অসুস্থ। নবী কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর স্থির থাকতে পারলেন না, ছুটে গেলেন তার বাড়িতে। তার শিয়রে বসে গেলেন রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। পরম মমতার সাথে তাকে বললেন, ‘তুমি ইসলাম গ্রহণ কর।’ বালকটির পিতা সেখানেই উপস্থিত ছিল। বালকটি তার পিতার দিকে তাকালো, যেন অনুমতির অপেক্ষায়। বাবা বললেন, ‘আবুল কাসেমের কথা মেনে নাও।’ তৎক্ষণাৎ বালকটি ইসলাম গ্রহণ করল। এর অল্প কিছুক্ষণ পরেই সে মারা গেল। আল্লাহর রাসূলের একজন উম্মত অনন্তকালের জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে গেল আল্লাহর রাসূল যে কি পরিমাণ খুশি হলেন তা প্রকাশ করা কঠিন। রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার বাড়ি হতে এ কথা বলতে বলতে বের হয়ে এলেন যে, ‘সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, যিনি ওকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে নিলেন।’ এরপর সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘তোমরা তোমাদের এক সাথীর উপর (জানাযার) নামায পড়।’ (চলবে)। 
সংকলক: লেখক ও গবেষক।