খুলনা | বৃহস্পতিবার | ০৩ জুলাই ২০২৫ | ১৯ আষাঢ় ১৪৩২

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার মিছিল আজ

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৩ এ.এম | ০২ অগাস্ট ২০২৪


আজ শুক্রবার ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’ নামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচির নাম ‘প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল’। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক আবদুল কাদেরের এক বিবৃতিতে এ কর্মসূচির কথা জানানো হয়।
আজকের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, গণহত্যা ও গণগ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে দোয়া, শহিদদের কবর জিয়ারত, মন্দির, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন ও জুমার নামাজ শেষে ছাত্র-জনতার গণমিছিল।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের প্রাণের জন্মভূমি আজ এক মহাসংকটকাল অতিক্রম করছে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা হামলা পরিচালনা করে শান্তিপ্রিয় ছাত্র-জনতার রক্তে রাজপথকে রঞ্জিত করছে। কারও পরিচয় শিক্ষার্থী হলে তার ফোন চেক করে অত্যাচার নির্যাতন চালানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, অথচ আজ ছাত্র হওয়া যেন অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক সমাজও রক্ষা পাচ্ছে না তাদের নির্যাতনের হাত থেকে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করতেও ছাড়ছে না। শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমর্থনকারী ছাত্র জনতা কাউকে পেলেই গ্রেফতার ও এর মাধ্যমে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে বাছাই করে পাড়া মহল­ায় রেইড দিয়ে গণগ্রেফতারের নামে গ্রেফতার বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে তারা। গুম করার হুমকি দিয়ে আদায় করছে মোটা অংকের অর্থ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন সমন্বয়কসহ অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে বুধবার গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) কেন্দ্রীয় ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে ছেড়ে দিলেও এখনো ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেন, সমন্বয়ক আরিফ সোহেলসহ অসংখ্য ছাত্র জনতাকে কারাগার ও রিমান্ডে নির্যাতন করছে। জুলুম নির্যাতনে নিষ্পেষিত ছাত্র-জনতা মুক্তির প্রহর গুণছে। অসংখ্য ছাত্র-জনতা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে। অনেক ছাত্র ও সাধারণ মানুষ চোখ, কান, হাত, পা কিংবা শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছে। আজ ছাত্রসমাজ ঘরে শান্তিতে ঘুমাতে পারছে না। প্রতি মুহূর্তে কাটাতে হচ্ছে গ্রেফতার ও গুম হওয়ার আতঙ্কে। শহিদ ও গুম হয়ে যাওয়া মানুষের স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে বাংলার আকাশ বাতাস। এ ছাড়াও, আগামীর বাংলাদেশ গড়ার কারিগর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক মণ্ডলীর ওপর ক্যাম্পাসের ভেতরে হামলা করেছে পুলিশ নামক সন্ত্রাসীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর গায়েও হাত তুলেছে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা। এই ঘৃণ্য হামলার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, আপনারা জানেন আমরা আমাদের কোনো ব্যক্তি স্বার্থের জন্য আন্দোলন করছি না। আমাদের আন্দোলন আপনার ও আপনার সন্তানের মুক্তির জন্য। কী অপরাধ ছিল আমাদের? সাংবিধানিক অধিকার চাওয়াটা কি আমাদের অপরাধ? কী অপরাধে শত শত ভাইদেরকে হত্যা করা হলো? আমরা এর জবাব জানি না। কিন্তু এর জবাব ও বিচার না নিয়ে আমরা আমাদের আন্দোলন থামাব না। জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে শহিদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার হওয়া সবার স্মরণে আগামীকাল দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি।
জাতির এই দুর্দিনে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অপরাধে শহীদ, আহত, পঙ্গু ও গ্রেফতার হওয়া সকলের স্মরণে আজ দেশব্যাপী ‘প্রার্থনা ও ছাত্র জনতার গণমিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। শ্রমিক, পেশাজীবি, সংস্কৃতিকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবি, আলেম-ওলামাসহ বাংলাদেশের সকলস্তরের নাগরিকদের প্রতি কর্মসূচি পালনের আহŸান জানানো হয়।