খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর-গাড়িতে আগুন : যুবক নিহত

খবর প্রতিবেদন |
১০:৫৪ পি.এম | ০৩ অগাস্ট ২০২৪


গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মোঃ জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার দুপুরে উপজেলার চন্নাপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
নিহত জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় পাওয়া যায়নি। তিনি চন্নাপাড়া গ্রামের মোঃ কাজল মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে ওই গ্রামের মক্কা-মদিনা স্পিনিং কারখানার সামনে লেপ-তোশক তৈরির কাজ করতেন। কাজল মিয়া তাঁর আত্মীয়।
কাজল মিয়া সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন, পুলিশ ও বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে জাহাঙ্গীর আলম দোকানে ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে তিনি খবর পান, সড়কে জাহাঙ্গীরের লাশ পড়ে আছে। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে শিক্ষার্থীরা চিকিৎসার জন্য মাওনা চৌরাস্তার দিকে নিয়ে যেতে থাকেন। পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, ‘গুলিতে নাকি পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, তা জানতে পারিনি।’
এদিকে সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে সংবাদকর্মীরা নিহত ব্যক্তির ভাড়া বাসার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে মাওনা-শ্রীপুর আঞ্চলিক সড়কে বিক্ষোভকারীদের লাঠিসোঁটা নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায়। এ সময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা ছবি তোলার সময় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে ধাওয়া দেন।
বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের একজন সমন্বয়ক ইসরাত জাহান দাবি করেন, শনিবার শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খান বলেন, ‘রাস্তায় পড়ে গিয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না। আমরা ব্যস্ত আছি।’
এর আগে গাজীপুরের শ্রীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মাওনা হাইওয়ে থানা ও জেলা পুলিশ বক্সে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পুলিশের গাড়িসহ অন্তত সাতটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। আজ বেলা সোয়া দুইটার দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে সকাল ১০টায় বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও জনতা মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সড়কের নিচে অবস্থান নেন। সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালিয়ে খুনের প্রতিবাদ ও ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আন্দোলনকারীদের সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সড়কের নিচে এসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তাঁরা বিক্ষোভ নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে গেলে সেখানে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীরা ফিরে এলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটেন। অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে পূর্ব দিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থান নেয় পুলিশ। বিক্ষোভ মিছিলের একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উড়াল সড়কের নিচে থাকা মাওনা হাইওয়ে থানা-পুলিশ বক্স ও গাজীপুর জেলা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালানো হয়। পরে বেলা একটার দিকে মাওনা চৌরাস্তা-শ্রীপুর সড়কে ভাই ভাই সিটির সামনে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় সেখানে পুলিশের তিনটি গাড়িসহ সাতটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
সূত্রগুলো আরও জানায়, পুলিশের পিকআপ ভ্যান ভাই ভাই সিটি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। এ সময় মাওনা-শ্রীপুর সড়কে পূর্ব দিক থেকে একদল পুলিশ ভাই ভাই সিটির সামনে অবস্থান নেয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা বেশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের শেলও ছোড়ে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এরপর বেলা দুইটার দিকে মাওনা চৌরাস্তায় তিনটি পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
বেলা ২টা ২০ মিনিট নাগাদ এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পুরো মাওনা চৌরাস্তা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিক্ষোভ করছিল আন্দোলনকারীরা। সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ আছে। মাওনা চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেলেও সড়কটির কোথাও আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা-কর্মীরা নেই।
এসব বিষয়ে জানতে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। 
সূত্র :  প্রথম আলো অনলাইন।