খুলনা | বুধবার | ১৫ জানুয়ারী ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ভাইরাল বিবৃতিটি ভুয়া

খবর প্রতিবেদন |
০১:৪০ এ.এম | ০৪ অগাস্ট ২০২৪


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে দেশ জুড়ে চলছে বিভিন্ন কর্মসূচি। শনিবার পালিত হচ্ছে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল। আগামী রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনের ডাকও দেওয়া হয়েছে। তবে এর মধ্যেই এই আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের বরাত দিয়ে একটি বিবৃতি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। 
দাবি করা হচ্ছে, বৈষম্য ছাত্র আন্দোলনকে কেউ যেন নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে না পারে সে জন্য সমন্বয়কেরা সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন, সেই সঙ্গে সরকারকে ৭ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন। আরও দাবি করা হচ্ছে, এই সমন্বয়কেরা বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে এবং বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তার কাজ করতে দিতে হবে। যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হয়, পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
‘সাপোর্টাস অব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামের ৩ লাখ ৯৭ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্র“পে শনিবার সকাল ১০টা ৫৩ মিনিটে ‘আব্দুল মালেক’ নামের ফেসবুক এ্যাকাউন্ট থেকে কথিত বিবৃতিটি পোস্ট দেওয়া হয়। 
দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বিবৃতিতে স্বাক্ষর থাকা আসিফ মাহমুদের ফেসবুক পেজ ঘুরে দেখা যায়, তিনি শনিবার সকাল ১০টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করার আহŸান জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। 
পোস্টটিতে তিনি লিখেন, ‘আজ কেউ ঘরে বসে থাকবেন না। আপনার নিকটবর্তী বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিন। না হলে নিজ এলাকা থেকেই সংগঠিত করে বিক্ষোভ মিছিল বের করুন। ৩টার আগেই সবাই দলে দলে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে চলে আসুন। দীর্ঘদিন গুম, অবরুদ্ধ, নির্যাতন এর মধ্যে থাকায় আপনাদের মাঝে আসতে পারিনি। আজ আসছি এবং ছাত্র-জনতার আশা-আকাক্সক্ষার ঘোষণা নিয়েই। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল পালন করুন৷ আঘাত কিংবা বাঁধা আসলে প্রতিরোধ করুন। অনুপ্রবেশ করে যেন কেউ আন্দোলনকে বিতর্কিত না করে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।’
এছাড়া বিবৃতিটি সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্র“পে দেওয়া এক বার্তায় আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘এটা ভুয়া, এমন কোন বিবৃতি আমরা দিইনি। এডিটেড, কেউ বিভ্রান্ত হবেন না।’ 
এছাড়া এই ছয় সমন্বয়কের সূত্রে শুক্রবার (২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ৪৪ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ্যাসাইনমেন্ট কর্মকর্তা সঞ্জিত চন্দ্র দাস একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, ‘সাধারণ ছাত্রদের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নে ৩ মাস সময় বেঁধে দিয়ে আর কোন নতুন কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। ৬ সমন্বয়ক ছাড়া অন্য কেউ সমন্বয়ক দাবি করে কর্মসূচি দিলে তা ছাত্রদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’ তবে তাঁর এই পোস্টেরও কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, তিনি সংঘাত চান না। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা আছে। তিনি তাঁদের সঙ্গে বসতে চান, তাঁদের কথা শুনতে চান। 
শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের সময় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে এসব আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আসিফ মাহমুদ তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেন, ‘যখন আমরা ডিবি অফিসে বন্দী ছিলাম তখনই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আন্দোলন স্থগিত করতে বলা হয়। এমনকি জোর করে গণভবনে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও চলছিল। এই প্রস্তাবের প্রতিবাদে ও মুক্তির দাবিতে আমরা অনশনে বসেছিলাম। আপোষহীনতার মূল্য যদি মৃত্যুও হয় তাও পরিশোধ করতে প্রস্তুত আছি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের অংশগ্রহণ আহŸান করছি।’