খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুলনায় দুর্বৃত্তদের লুণ্ঠনের পরিসংখ্যান নেই : জনপ্রতিনিধি ও আ’লীগের শীর্ষ নেতারা গেল এক সপ্তাহ আত্মগোপনে

ব্যক্তিগত আক্রোশেই অধিকাংশ লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:০৪ এ.এম | ১০ অগাস্ট ২০২৪


২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেও আব্দুস সালাম খানের কাছে ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে পরাজিত হন আব্দুল গণি গাজী। ব্যক্তিগত আক্রোশের জের ধরে গত ৫ আগস্ট দিবাগত রাত ১২টার দিকে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম খানের বসতঘর-বাড়ি ও মেসার্স রায়হান এন্টারপ্রাইজ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক লুটপাটের পর অগ্নিসংযোগ করে আব্দুল গণি গাজী ও তার পোষ্য সন্ত্রাসীরা। শুধু তাই নয়, স্বাধীন সমাজ কল্যাণ যুব সংস্থা নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির কার্যালয়ও পুড়িয়ে দিয়েছে। ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম খানের ২০ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের সয়-সম্পত্তি ক্ষয়ক্ষতির পর একটি পানি পানের পাত্রও নেই অবশিষ্ট। ঘটনাটি জেলার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আংটিহারা গ্রামের। স্থানীয় বাসিন্দা মৃত করিম বক্স গাজীর ছেলে অভিযুক্ত আব্দুল গনি গাজী জামায়াতের রাজনীতি ছেড়ে বিএনপি ঘুরে সর্বশেষ আ’লীগ নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ৫ আগস্ট বিকেলে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে কয়রাতেই। উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম মহসিন রেজার গুলিতে ১০ জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিক্ষুব্ধদের টোপের মুখে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জিএম মহসিন রেজাসহ চারজন নিহত হয়।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে খুলনা আ’লীগ অফিস, সংসদ সদস্যদের ও সিটি মেয়রের বাড়ি, আ’লীগের কতিপয় নেতা-কর্মীর অফিস ও বাড়িতে লুটপাট-অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই কারো কাছেই। অন্যদিকে, খুলনায় আ’লীগের সাবেক-বর্তমান সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র, আ’লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতারা গেল এক সপ্তাহ আত্মগোপনে রয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীতে চাঁদাবাজি, লুটপাট, অগ্নিকান্ডের দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি। তবে পাইকগাছা উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এস এম এনামুল হকের বিরুদ্ধে হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শোকজ করেছে জেলা বিএনপি।
কয়রার দক্ষিণ বেদকাশিতে ক্ষতিগ্রস্ত ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম খানের ছেলে আবু রায়হান খান অশ্র“সিক্ত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, আংটিহারা গ্রামের মৃত করিম বক্স গাজীর ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল গনি গাজীর নির্দেশে একই গ্রামের মামুন কবির গাজী, শওকত খাঁ ওরফে জেরফান, মুনজুর আলম, মামুন কবির খোকা, আবু বাক্কার গাজী, লিয়াকত গাইন, শরিফুল ইসলাম মধু, জেনারুল ইসলাম, মারুফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, রব্বানী গাজী, সোহেল আমিন, রিয়াজ হোসেন শিমুল, শামীম হোসেন ও সাদ্দাম গাইনসহ অজ্ঞাত আরও ২০/৩০ জন মিলে আমাদের সবকিছুই পুড়িয়ে দিয়েছে। পানি খাবার মতো একটা পাত্রও নেই। রাজনৈতিক কোন শত্র“তা নয়, ইউপি নির্বাচনে পরাজয়ের ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার জের ধরেই আব্দুল গণি মেম্বর এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এখন আমার আব্বা-মা, ভাই-বোনসহ সপরিবারে হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে ওরা।
খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা বলেছেন, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার সাথেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পাহারাদারের কাজ করছে। নগরীতে এখনো পর্যন্ত একজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাইনি। নগর বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক বদরুল আনাম খান ও মাসুদ পারভেজ বাবুর সমন্বয়ে একটি অভিযোগ সেল গঠন করা হয়েছে। তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান ও সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, পাইকগাছায় একজন হিন্দু ব্যবসায়ীর বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে। তাকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া কারো বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অন্যদিকে, মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যালয়, বসত-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, মৎস্য ঘের ও ব্যক্তিগত অফিস জবর দখলের বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে দখলদারিত্বে কোন রাজনৈতিক দলের পদ-পদবীধারী নেতার সরাসরি সম্পৃক্ততা না থাকলেও যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা গেছে। দু/একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেলে এসব বিষয়ে থানা বা আদালত মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে এখনি এসব বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি কেউ।