খুলনা | শুক্রবার | ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলায় কার্যকর পদক্ষেপ কাম্য

|
১২:১৯ এ.এম | ১৫ অগাস্ট ২০২৪


দলীয় প্রভাবের কারণে কয়েকটি ব্যাংকের আর্থিক কার্যক্রম মারাত্মক ঝুঁঁকির মুখে পড়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যাংক তো সরাসরি আওয়ামী লীগের দখলে চলে গেছে বলেও সংশ্লিষ্টদের অনেকের অভিযোগ। স¤প্রতি গণআন্দোলনের মুখে সরকারের পতনের পর সেসব ব্যাংক ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। তবে কয়েকটি ব্যাংক, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের আমলে দখল হওয়া তিনটি ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, সরকারের পতনের পর বিভিন্ন দাবিতে ব্যাংকগুলোয় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে সেসব ব্যাংকের লেনদেনও। আমানতকারীদের স্বার্থরক্ষায় তাই ব্যাংকগুলোয় দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরাতে রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক সার্কুলার এবং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। এদিকে সরকারি খাতের কয়েকটি ব্যাংকের বিদ্যমান ব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কর্মীরা চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। যে কোনো সময় এই ক্ষোভ প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে-এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে দ্রুত শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি হয়ে পড়েছে। পর্যায়ক্রমে দখলে থাকা ব্যাংকগুলো নিয়মের মধ্য দিয়ে প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি যেসব অনিয়ম হয়েছে, সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দ্রুত ব্যাংক খাতের ধস ঠেকানো ও শৃঙ্খলা ফেরানো প্রয়োজন। কারণ ব্যাংক খাতসহ অর্থনৈতিক পরিবেশ যথাসম্ভব দ্রুত স্বাভাবিক করতে না পারলে সংকট আরও বাড়তে পারে, বিনিয়োগ কমতে পারে; ফলে থমকে যেতে পারে অর্থনীতি। বলা বাহুল্য, গেল সরকারের সময়েই ব্যাংক খাতে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করতে আমরা দেখেছি। এ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক এসব বিশৃঙ্খলা রোধে কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, ডলারের দামের অস্থিতিশীলতা, রিজার্ভের ঘাটতি, দেশি-বিদেশি পর্যায়ে ঋণের দায় বৃদ্ধি, প্রবাসী ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ হ্রাস; সর্বোপরি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের নামে অর্থ লুট হওয়ায় এ খাতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) গতকাল জানিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে প্রায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ বা জিডিপি’র ২ শতাংশের সমান।
ব্যাংক খাতে দুষ্ট চক্র ভেঙে ফেলতে এবং স্বচ্ছতা আনতে তাই একটি সুনির্দিষ্ট, সময় উপযোগি, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, জবাবদিহিমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন এখন সময়ের দাবি। স্বচ্ছতার স্বার্থে এ খাতের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরাও দরকার। অবশ্য নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সবার মাঝেই প্রত্যাশা জন্ম নিয়েছে। ইতোমধ্যে নবগঠিত অন্তর্বতীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ। তার জন্য অর্থনীতির এসব পরিচিত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হবে নিশ্চয়ই। দেশের ব্যাংকগুলোয় শৃঙ্খলা ফেরানো তো বটেই, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি আর্থিক খাতের সংস্কারে সফল হবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। দেশের অর্থনীতির গতি বেগবান করতে অন্তর্বতী সরকার কার্যকর পদ্ধতি গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশা।