খুলনা | শনিবার | ২১ জুন ২০২৫ | ৭ আষাঢ় ১৪৩২

পৃথক তিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি শেখ হাসিনা

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৫ এ.এম | ২৭ অগাস্ট ২০২৪


বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পৃথক তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ সাবেক মন্ত্রী, সাবেক সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধিসহ  আ’লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকত, মাদারীপুরে তাওহীদ সন্ন্যামাত ও রংপুরে কলার দোকানের কর্মচারী মেরাজুল ইসলাম পলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পৃথক তিন মামলার বাদী।
রাজধানী : জেলার মোহাম্মদপুর সরকারি মডেল কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সৈকত (১৯) হত্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের নাম উলে­খ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার  রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় নিহতের বাবা মোঃ মাহাবুবর রহমান বাদী হয়ে এ হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় অন্য আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল­াহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, তেজগাঁও জোনের সাবেক উপ-পুলিশ কমিশনার এইচ এম আজিমুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সাবেক এডিসি রওশানুল হক সৈকত। এছাড়া মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (পেট্রোল) শহিদুল হক, মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান, মোহাম্মদপুর থানার সাবেক ওসি মাহফুজুল হক ভূঁইয়া, মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ তোফাজ্জল হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ শাহরিয়ার আলমের নাম মামলায় উলে­খ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত ৩০ থেকে ৪০ পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে নিহতের বাবা উলে­খ করেছেন, গত ১৯ জুলাই আনুমানিক বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে নূরজাহান রোডের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় তার ছেলেকে। তিনি তার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার চেয়েছেন।
মাদারীপুর : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চার সাবেক এমপির নামে মাদারীপুরে হত্যা মামলা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় জেলার তাওহীদ সন্ন্যামাত (২১) হত্যার ঘটনায় এ মামলা দায়ের কারা হয়েছে। রোববার রাতে মাদারীপুর সদর মডেল থানায় জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব কামরুল হাসান মামলাটি করেন। মামলায় ৯২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাত সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সুচিয়ারভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
ওই চার সাবেক সংসদ সদস্য হলেন শাজাহান খান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবদুস সোবহান গোলাপ ও নূর-ই আলম চৌধুরী। এ ছাড়া অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল­া, সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুনীর চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান, সাবেক চেয়ারম্যান ও শাজাহান খানের ভাই ও আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক পৌর মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ প্রমুখ।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মোস্তফাপুর গোল চত্বর থেকে নতুন বাসস্ট্যান্ডের দিকে যাচ্ছিলেন। খাগদী বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালে তাঁদের লক্ষ্য করে হামলা চালান যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই সময় আন্দোলনকারীদের ঠেকাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে গুলিও ছোঁড়া হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তাওহীদ ও রোমান নামের দু’জন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এ ঘটনায় গত শনিবার রোমানের স্ত্রী কাজল আক্তার বাদী হয়ে ৩০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। তবে সেই মামলায় শেখ হাসিনাসহ শীর্ষ কোনো নেতা আসামি ছিলেন না। ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা এই হত্যায় জড়িত বলে বাদী উলে­খ করেন। এরপর রোববার মধ্যরাতে সংক্ষুব্ধ হয়ে কামরুল হাসান নামের ওই ব্যক্তি আরেকটি মামলা করেন। ছাত্র আন্দোলনে নিহতের ঘটনায় মাদারীপুরে এ নিয়ে দু’টি মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এইচ এম সালাউদ্দিন বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত তাওহীদ সন্ন্যামাতকে হত্যার ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। মামলাটি তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
রংপুর : স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন নিহত মেরাজুল ইসলামের স্ত্রী মোছাৎ নাজমীম ইসলাম। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল­াহ আল মামুনসহ ৩০ জনের নাম উলে­খ করে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার বিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে মামলা আবেদন করেন তিনি। মামলাটি গ্রহণ করে রংপুর চিপ মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ রাজু মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানাকে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে এজাহার হিসাবে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রংপুর সিটি করর্পোরেশন সামনে ফুট ওভার ব্রিজের নিচে কলার দোকানের কর্মচারী মেরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত মেরাজুল ইসলামের স্ত্রী মোছাৎ নাজমীম ইসলাম ৩০ জনের নাম উলে­খ করা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও রংপুর জেলা পুলিশ সদস্য ও অন্যান্য ১শ’ থেকে ১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। 
নামীয় আসামিরা হলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল­াহ আল মামুন, রংপুর মেট্রোপলিটনের সাবেক কমিশনার মোঃ মনিরুজ্জামান, সাবেক রেঞ্জ ডিআইজি আব্দুল বাতেন, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ শাহাজান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলাম, হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান, আবু আশরাফ সিদ্দিকী, সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম, পুলিশ পরিদর্শক আতাউর রহমান ও আব্দুর রশীদ প্রামানিক। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার উৎপল কুমার পাল, সহকারী কমিশনার আল ইমরান, সহকারী কমিশনার আরিফুজ্জামান আরিফ, রসিকের ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রফিকুল আলম, ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাদত হোসেন, ২৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হারুন অর রশীদ, ৩০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম তোতা, ২৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহাজাদা আরমান, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী তুহিন, জেলা যুবলীগের সভাপতি লক্ষিণ চন্দ্র দাস, যুবলীগ নেতা ন্যাংড়া মামুন, আওয়ামী লীগ নেতা নবিউল­াহ পান্না, যুবলীগ নেতা ডিজেল, সাবেক সংসদ সদস্য নাছিমা জামান ববি, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি।