খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নেই স্থায়ী ক্যাম্পাস/ চালু হয়নি শিক্ষা কার্যক্রম

আগস্ট মাসেই নিয়োগের সিন্ডিকেট করলেন শেহামেবি খুলনার উপাচার্য!

এন আই রকি |
০১:০১ এ.এম | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪


গত ৫ আগস্টের পর ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি রাজনৈতিক পদ হিসেবে বিবেচনা করা হতো।   স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর তাদের মতাদর্শের নিয়োগ পাওয়া উপাচার্যসহ অনেকেই স্বেচ্ছায় আবার কেউবা ছাত্রদের বিক্ষোভের কারণে পদত্যাগ করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে খুলনার শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান ব্যস্ত ছিলেন নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। গত ২৭ আগস্ট তিনি তড়িঘড়ি করে অনলাইনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভা করে চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে নিয়োগ দেওয়া  ১৪টি পদের অনুমোদন করেছেন। তড়িঘড়ি করে নিয়োগ দেওয়ার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) সহ বিভিন্ন পদ রয়েছে। এমনকি নিয়োগের বেশ কয়েকটি পদে সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তবে এই নিয়োগ প্রক্রিয়াকে রুটিন ওয়ার্ক বলে আখ্যায়িত করেছেন উপাচার্য ।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৩ মে তৎকালীন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় খুলনার উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন। এখনও অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়নি। তবে এই অঞ্চলের ৯টি মেডিকেল কলেজ এবং ৫টি নার্সিং কলেজ দেখভাল করার কাজ নিয়ে তারা ব্যস্ত। নগরীর বটিয়াঘাটার এলাকায় ৫০ একর জমির ওপর ১ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্যাম্পাস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে নকশা পরিবর্তন ছাড়া নানান কারণে সেটা আর বাস্তবায়ন হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে নিরালা আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। ৫ আগস্টের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। 
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ায় তার প্রভাব ছিল অনেক। খুলনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল, শেখ জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেলসহ অনেকের আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। এছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা আলী আকবর টিপু ছিল উপাচার্যের ভাগ্নে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোতে গোপালগঞ্জের অগ্রাধিকারসহ শেখ পরিবারের অনুরোধ রাখতেন এই উপাচার্য। সাবেক প্যানেল মেয়র টিপু তার আত্মীয় হওয়ায় তিনিই উপাচার্যের সাথে মিলে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯টি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই নিয়োগ কার্যক্রমের মধ্যে গত ১২ জুন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট, অফিস সহায়ক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং পিও (পার্সোনাল অফিসার) পদগুলোর লিখিত পরীক্ষার ফলাফলসহ মৌখিক পরীক্ষার সময় ও স্থান জানানো হয়। তবে একই তারিখে কুক, ড্রাইভার, রেজিষ্ট্রার, এবং উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব)পদে সরাসরি মৌখিক পরীক্ষার জন্য চিঠি দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে স্থবিরতা চলে আসে। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ অনেকেই পদত্যাগ শুরু করেন। ঠিক সেই মুহূর্তে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে সিন্ডিকেট মিটিং করার জন্য তোড়জোড় শুরু করেন। অবশেষে ২৭ আগস্ট তিনি অনলাইনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভা আহŸান এবং নিয়োগগুলো চূড়ান্ত করেন। ইতোমধ্যে তিনি রেজিস্ট্রার পদে কে এম রব্বানী এবং উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব)পদে আসমা খাতুনের নিয়োগ সিন্ডিকেট থেকে চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া এই নিয়োগের মধ্যে অধ্যাপক পদে ৪টি এবং পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে প্রার্থী না পাওয়ায় নিয়োগ দিতে পারেননি। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে এই উপাচার্যের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৯ জন স্থায়ীপদসহ অস্থায়ীভাবে ৫/৬ জন কর্মরত রয়েছেন। এরমধ্যে উপাচার্য, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজন রয়েছে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা।  তবে নিয়োগের সকলেই এর আগে মাস্টাররোল বা চুক্তিতে বিশ্বদ্যিালয়ে কর্মরত ছিলেন। যার কারণে তড়িঘড়ি করে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। 
সূত্রগুলো জানায়, সিন্ডিকেট সভায় অনলাইনে অধিকাংশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। তাছাড়া কেউ কেউ এ মুহূর্তে নিয়োগের বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন। 
উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, আগস্টের ২৭ তারিখে অনলাইনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগসহ অন্যান্য অনেক বিষয় ছিল। ১৪টি পদে নিয়োগের অনুমোদন করা হয়। এরমধ্যে কয়েকজনকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া রুটিন ওয়ার্ক কোন তড়িঘড়ি বা অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। নিয়োগের আবেদনের সময় কাগজে সমস্যা থাকায় অনেকেই কার্ড পায়নি। নিয়োগ শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে করা হয়েছে। 
তিনি আরও বলেন, ৯ থেকে ২০ গ্রেডে পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক সময় প্রার্থী কম থাকায় সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। তিনি উপাচার্য হওয়ার পর ১০টি সিন্ডিকেট এবং ৩টি নিয়োগ হয়েছে। এই নিয়োগের মধ্যে বেশ কয়েকজন গোপালগঞ্জের রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আব্দুর রউফের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ছিল। তাই তার আগে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছি। তিনি আরও দাবি করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া সব তার হাতে থাকে না। এটা চূড়ান্ত হওয়ার আগে সিন্ডিকেটে অনুমোদন করা লাগে।