খুলনা | সোমবার | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬ পৌষ ১৪৩১

মণিপুরের জিরিবাম বিভাগে জরুরি অবস্থা জারি

সংঘর্ষে নিহত ৬, আকাশে উড়ছে ড্রোন, আরও হামলার শঙ্কা

খবর প্রতিবেদন |
০২:০১ এ.এম | ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪


ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। শনিবার এই দুই জেলায় ড্রোন ও রকেট হামলার পাশাপাশি গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। ভয়াবহ এ সহিংসতার পর জিরিবামে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
জিরিবামের বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশনা দিয়েছেন, জরুরি অবস্থা চলাকালীন একসঙ্গে পাঁচজন বা তারও বেশি মানুষ জড়ো পারবেন না এবং সঙ্গে কেউ অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। এছাড়া অনুমতি ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের জিরিবাম ও বিষ্ণুপুর জেলায় একের পর এক ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এসব হামলা- গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ছয়জন নিহত ও কয়েকজন আহত হয়েছেন। একটি ঘটনায় নজিরবিহীন ভাবে রকেট হামলা চালানো হয়েছে বলে এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে। 
পুলিশ বলছে, শনিবার সকালে রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে ২২৯ কিলোমিটার দূরে জেলার নুংচাপ্পি গ্রামে সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহী হামলায় ইউরেম্বাম কুলেন্দ্র সিংহ নামে ৬৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি নিহত হন। অন্যদিকে মেইতি সশস্ত্র গোষ্ঠী ও পাহাড়ি কুকি উপজাতিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে পাঁচজন নিহত হন। 
জিরিবাম পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট (এসপি) জানান, মণিপুরের মইরাং শহরে কুকি বিদ্রোহীরা যখন রকেট চালিত বোমা হামলা চালায় প্রার্থনায় রত মেইতি স¤প্রদায়ের এক বৃদ্ধ নিহত হওয়ার একদিন পর আবার হামলার ঘটনাটি ঘটল। 
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আকাশে ক্রমাগত ড্রোন উড়তে দেখে তারা চরম ভীতিকর পরিস্থিতিতে আছেন। ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার রাতে বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলায় বহু ড্রোন দেখা গেছে, যা বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
এমনকি পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে, এই দুই জেলার বাসিন্দারা বাড়িঘরের লাইট বন্ধ করে দেন এবং কেউই রাতে বাইরে বের হওয়ার সাহস পাননি।
ইম্ফল পশ্চিম জেলার আশেপাশের দু’টি স্থানে ড্রোন থেকে বোমা ফেলা হয়, যা স্থানীয় বিদ্রোহীদের কাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনার পর বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে আরও অনেক ড্রোন উড়তে দেখেন বাসিন্দারা।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, শুক্রবার রাতে মণিপুরের বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে বহু ড্রোন দেখতে পান বাসিন্দারা। এ সময় তাদের মাঝে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে এই দুই জেলার বাসিন্দারা ঘটনার সময় তাদের বাড়িঘরের লাইট বন্ধ দেন। ভয়ে কেউই বাড়ির বাইরে বের হতে পারেননি রাতে।
ইম্ফল পশ্চিম জেলার আশপাশের দু’টি স্থানে ড্রোন থেকে বোমা ফেলেছেন সেখানকার বিদ্রোহীরা। এই ঘটনার পর বিষ্ণুপুর ও ইম্ফল পূর্ব জেলার আকাশে অনেক ড্রোন উড়তে দেখেছেন বাসিন্দারা।
মণিপুরের সরকারি এক কর্মকর্তা বলেছেন, নতুন করে দেখা দেওয়া সংঘাতপূর্ণ এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। তারা বেশিসংখ্যক মানুষের একসাথে চলাচলে বিধি-নিষেধ আরোপের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করছেন।
বিষ্ণুপুর জেলার একাধিক এলাকায় আকাশে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে। গুলির এই ঘটনা জনসাধারণের মাঝে চরম আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তবে নিরাপত্তা বাহিনী নাকি অন্যরা গুলি চালিয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
মণিপুরের এক সরকারি কর্মকর্তা জানান, নতুন করে সংঘাত দেখা দেওয়া এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনী এখন উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি বড় জমায়েতে বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে তারা। বিষ্ণুপুর জেলায় কয়েকটি স্থানে আকাশে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হয়েছে। এতে জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব গুলি নিরাপত্তা বাহিনী নাকি অন্য কেউ চালিয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এর আগে, শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে স¤প্রদায়ের লোকজন ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে। রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ এই প্রতিবাদ-সমাবেশে অংশ নেন। সেদিনই ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনা ঘটেছে। 
এর আগে, শুক্রবার মণিপুরের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেংয়ের বাসভবনে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা রকেট হামলা চালায়, যাতে একজন নিহত ও ছয়জন আহত হন।
এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনী পার্শ্ববর্তী চুরাচাঁদপুর জেলায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করেছে। মণিপুর পুলিশের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলায় দু’টি স্থানে বেসামরিকদের লক্ষ্য করে দূর-পাল­ার রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে এক বয়স্ক ব্যক্তি নিহত ও ছয়জন আহত হন।
রাজ্যের চলমান সংঘাতে সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে টহল দেওয়া হচ্ছে এবং পরিস্থিতি মূল্যায়নে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উচ্চ-পর্যায়ের জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক আহŸান করেছেন।
মণিপুরে প্রথম ড্রোন হামলা চালানো হয় গত ১ সেপ্টেম্বর, যেখানে ইম্ফল পশ্চিম জেলার কৌত্র“ক গ্রামের কাছে ড্রোন থেকে বোমা ফেলা হয়। সেদিন বোমার পাশাপাশি গ্রামে বন্দুক হামলাও চালানো হয়, যার ফলে অন্তত দু’জন নিহত ও নয়জন আহত হন।
গত বছরের মে মাসে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে স¤প্রদায় এবং কুকি-জো উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়, যেখানে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। এই চলমান সহিংসতায় এবারই প্রথমবারের মতো ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।
শুক্রবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতে স¤প্রদায়ের লোকজন ইম্ফল উপত্যকার পাঁচটি জেলায় সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন, যেখানে হাজার হাজার মানুষ অংশ নেন। এরপরই ড্রোন ও রকেট হামলার ঘটনা ঘটে। এই নতুন সংঘাতের কারণে মণিপুর সরকার রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
তবে মণিপুরে প্রথম ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর। ওই দিন  ইম্ফল পশ্চিম জেলার কৌত্র“ক গ্রামের কাছে ড্রোন থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেদিন ড্রোন থেকে বোমা হামলার পাশাপাশি গ্রামে বন্দুক হামলাও চালানো হয়। এতে অন্তত দু’জন নিহত ও ৯ জন আহত হন।
গত বছরের মে মাসে মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতি স¤প্রদায় এবং কুকি উপজাতিদের মধ্যে সহিংসতা শুরু হয়। ওই সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এরপর রাজ্যজুড়ে থেমে থেমে সহিংসতা চললেও এই প্রথমবারের মতো চলমান জাতিগত সংঘাতে ড্রোন ও রকেট ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।