খুলনা | রবিবার | ২৯ জুন ২০২৫ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২

দায়িত্ব অবহেলা, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের দায়ে কেসিসির সাবেক লাইসেন্স অফিসার ফারুখ হোসেন সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |
১২:৫৭ এ.এম | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪


খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত রবিবার কেসিসি’র সচিব (অতিঃ দায়িত্ব) সানজিদা বেগম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়। এরআগে, দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একাধিকবার পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিলেন তিনি। তবুও সদ্য সাবেক সিটি মেয়রের আর্শীবাদপুষ্ট হওয়ায় তিনি বারবার চাকুরি বহাল ছাড়াও পদোন্নতি পান। সদ্য বরখাস্ত কর্মকর্তা ফারুখ হোসেন তালুকদার বাগেরহাটের রামপাল থানাধীন মলি­কের বেড় এলাকার আব্দুস ছত্তার তালুকদারের ছেলে।
রোববার বরখাস্ত আদেশে বলা হয়েছে, সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে ২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ১১৩০নং স্মারকে অটোরিকশার আটককৃত ৪৮টি মোটর কম জমা করার অভিযোগসহ উক্ত  মোটরের মূল্য বাবদ এক লাখ ৯২ হাজার টাকা কেসিসি’র কোষাগারে জমা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দিয়ে দশ কার্য দিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। কিন্তু কোন ব্যাখ্যা ও টাকা জমা দেননি তিনি। এ ধরনের কর্মকাণ্ড খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ ও এবং চ ধারা মতে অর্থাৎ দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাতের দায়ে দোষী তথা শান্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরনের কর্মকান্ডে কেসিসি’র ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।
এ অবস্থায়, সংস্থাটির সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কর্মকর্তা-কর্মচারী) চাকুরি বিধিমালা ১৯৯৩ এর ক, খ, ও এবং চ ধারায় বর্ণিত দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, দুর্নীতি পরায়ন এবং অর্থ আত্মসাথের কারণে পুরুদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় একই বিধিমালার ৪৪ (১) ধারামতে কেসিসি’র নিম্নমান সহকারী এবং সাবেক সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার বর্তমানে কঞ্জারভেন্সি সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত মোঃ ফারুখ হোসেন তালুকদারকে নিম্নমান সহকারী পদ থেকে নির্দেশক্রমে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হল। সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে আপনি শুধুমাত্র খোরাকী ভাতা প্রাপ্ত হবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে গত ২০২৩ সালের শুরুর দিকে খুলনা সিটি কর্পোরেশনে ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়। তারপরও নগরীতে বেশ কিছু জায়গায় এই অটোরিকশা দেখা যায়। ফলে খুলনা সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু ব্যাটারি চালিত রিকশা জব্দ করে। এক একটি অটোরিকশা ৪টি ব্যাটারী, মোটর ও কন্ট্রোলার দিয়ে বানানো হয়। ফারুখ হোসেন তালুকদার কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার হিসাবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কেসিসিতে ১ হাজার ৮৫৩টি অটোরিকশার ব্যাটারী আটক করা হয়। সে হিসাবে মোট ৪৬৩টি মোটর জমা থাকার কথা কেসিসির ভান্ডারে। তবে জমা দেওয়া হয়েছে ৪১৫টি। ৪৮টি মোটরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স কর্মকর্তা ফারুখ হোসেন তালুকদার তার নিজস্ব তত্ত¡াবধায়নে রেখেছিলেন অটোরিকশার ব্যাটারী ও মোটর। তবে ভান্ডারে মোটর কম থাকায় শুরু করা হয় তদন্ত। সে সময় তদন্তে উঠে আসে ফারুক হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ। তিনি ভান্ডার থেকে ৪৮টি ব্যবহারযোগ্য মোটর বিক্রি করে দেন। যার মূল্য ১ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এ বিষয়ে ২০২৩ সালের ২৯ মে সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক শাখা থেকে কেসিসির কোষাগারে টাকা পরিশোধের জন্য একটি নোটিশ দেওয়া হয় ফারুখ হোসেন তালুকদারকে। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও পার হয়ে যাচ্ছে প্রায় দেড় বছর। এখনো টাকা পরিশোধ করেননি তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, নিম্নমান সহকারী পদে চাকুরিতে ঢুকে তৎকালীন মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে বাগিয়ে নেন সিনিয়র লাইসেন্স অফিসারের চেয়ারটি। সেখানে বসেই শুরু করেন সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি। আর তৈরি করেন সিন্ডিকেট। কেসিসি’র লাইসেন্স শাখায় ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আত্মসাৎ হওয়া প্রায় ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকার মধ্য থেকে ২৫ লাখ ২৫ টাকা ফেরত দিয়েছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিসুর রহমান বিশ্বাসের আমলে। তিনিই সে সময় নানা অভিযোগে ২০১৭ সালের মে মাসে সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার থেকে সরিয়ে ফারুক তালুকদারকে প্রথমে ট্যাক্স বিভাগে সহকারী এবং পরে সহকারী ট্যাক্স কালেক্টর (এসিটি) হিসাবে চলতি দায়িত্ব দেন। পরে তাকে আবার লাইসেন্স শাখায় পূর্বের পদে দেন সাবেক সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক।
কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কর তাজুল ইসলাম বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে নোটিশ দেয়ার পরও সে কোষাগারে টাকা পরিশোধ করেননি সাবেক এ কর্মকর্তা। তাই তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বরখাস্তকৃত লাইসেন্স কর্মকর্তা ফারুক হোসেন তালুকদারের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরটি (০১৭১৮ ৮৪৮০০৩) বন্ধ পাওয়া যায়।