খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

কক্সবাজারে রেকর্ড ২০ ইঞ্চি উচ্চতার বৃষ্টি, ৮ জেলায় বন্যার পূর্বাভাস

খবর প্রতিবেদন |
০১:০৯ এ.এম | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪


দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজার শহরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জেলার নয় উপজেলার অধিকাংশ গ্রাম দুই থেকে তিন ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। 
আবহাওয়ায় দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ৪৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ জুন এই জেলায় ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
তবে কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার (২০ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের আট জেলায় বন্যার কথা জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল­া, নোয়াখালী, ল²ীপুর জেলার তিন নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল শনিবার ও রোববার বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে এই আট জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরি, ফেনী ও গোমতী নদীর পানির উচ্চতা কমছে। অপরদিকে হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরি নদীর পানি বাড়ছে।
বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর আবহাওয়া সংস্থাগুলোর পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে, আগামী দুই দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ফেনী, কুমিল­া, নোয়াখালী, ল²ীপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। 
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী দুই দিন উপকূলীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে এই সময় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদীগুলোর পানি বাড়তে পারে। 
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সর্বশেষ যে অবস্থা তাতে পানি বাড়ছে বিশেষ করে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার দিকে। বান্দরবানে সন্ধ্যা ৬টায় লামা পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর কক্সবাজারের চিরিঙ্গা পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। 
তিনি বলেন, যেহেতু আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে বৃষ্টি আরও দুই দিন চলমান থাকবে তাতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। ফেনী, কুমিল­া ও নোয়াখালীর অনেক জায়গা থেকে এখনো পানি নামেনি, তাই এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হবে।
আবহাওয়ার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণপূর্বাংশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়ে বর্তমানে তা একই এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘ সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে দেশের উপকূলীয় এলাকা, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সমুদ্র বন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। 
এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মোঃ শাহীনুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশ ও তৎসংলগ্ন উত্তর–পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি দুপুরের পর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে করে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়েছে। আগামীকাল (আজ শনিবার) থেকে কক্সবাজারে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা কমে যাবে, তবে খুলনা অঞ্চলে বাড়বে। আরও দুই দিন এমন বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।