খুলনা | সোমবার | ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬ পৌষ ১৪৩১

মোংলা বন্দর থেকে মালামাল পাচারের মূল হোতা লিটন

১৫ বছর ধরে লুটেছে মোংলা সিএন্ডএফ ও বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০১:৩৫ এ.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪


মোংলা বন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর। দিনের পর দিন এ বন্দরের মান ও সক্ষমতা বাড়ছে। বাড়ছে পণ্য আমদানির পরিমাণ। এই বন্দরকে কেন্দ্র করে খুলনা বিভাগের ব্যবসায় প্রসার ঘটেছে। সেই সাথে তৈরি হয়েছে নানা ব্যবসায়িক সংগঠন। তবে এই প্রসারকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে অনেকেই অবৈধ কাজ করছে। এমনই একজন মোংলা সিএন্ডএফ সদস্য শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন।  আওয়ামী পরিবারের সদস্যদের সাথে হাত মিলিয়ে রাতের আঁধারে মোংলা বন্দর থেকে অবৈধ ভাবে বিভিন্ন পণ্য পাচার করতো এই লিয়াকত হোসেন লিটন ও তার সহযোগীরা। বিভিন্ন সময় অবৈধ মালামাল পাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে যৌথ বাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। 
স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বাগেরহাট জেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন। আ’লীগের ক্ষমতাবলে বেশ কয়েকবার বাগেরহাট জেলা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতির পদ ছিনিয়ে নেন তিনি। পরবর্তীতে বিপুল অর্থের বিনিময়ে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনীত হন তিনি। পরবর্তীতে খুলনার এক প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাকে বানচাল করে প্রহসন মূলকভাবে মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হন লিয়াকত।
সিএন্ডএফ সদস্যরা জানান, এই লিয়াকত বিগত কয়েক বছর আগে অসচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসে সিএন্ডএফ ফার্মে কাস্টমস সরকারি চাকুরির মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন। যার পিতা একজন দিনমজুর হিসেবে মিস্ত্রীর কাজ করে সংসার পরিচালনা করতেন। হঠাৎ করে আ’লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় যেন আলাউদ্দিনের চেরাগ হাতে পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিণত হয়। বর্তমানে তার অবৈধ সম্পদের মধ্যে রয়েছে বিশাল কোল্ড স্টোরেজ (বাগেরহাট), এসি-ফ্রিজ তৈরির কারখানা (বেইল কোম্পানি) কাটাখালি সংলগ্ন, বিই লজিষ্টিক নামে অনেকগুলো কাভার্ড ভ্যান। নামে-বেনামে শত শত বিঘা জমিসহ ব্যাংকে রয়েছে এফডিআর এবং ঢাকাতে রয়েছে অনেকগুলি বিলাস বহুল ফ্লাট। মেসার্স বিসমিল­াহ এন্টারপ্রাইজ, কিংস সিএন্ডএফ লিঃ, দ্রুত ইন্টারন্যাশনাল নামে গত ২০০৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনটি সিএন্ডএফ ফার্মঃ। এছাড়াও তিনি যাতায়াতের জন্য নামে-বেনামে প্রাডোসহ বিলাস বহুল অনেকগুলো গাড়ি ব্যবহার করেন।জানা যায়, শেখ লিয়াকত হোসেন ও তার ছোট ভাই জুয়েলের এসএসসি সনদপত্র ব্যতিত অন্যান্য সকল জাল সনদপত্র কাস্টমসে জমা দিয়ে সিএন্ডএফ লাইসেন্সের মালিক হয়ে যান। সিএন্ডএফ লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য গ্রাজুয়েশন বাধ্যতামূলক অথচ তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল সনদপত্র দাখিল করে এ যাবত পর্যন্ত অবৈধ ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। এ বিষয়ে সঠিক তদন্তের দাবি জানান সিএন্ডএফ সদস্যরা। 
সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, মোংলা কাস্টমস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত থাকার কারনে নির্বাহী কমিটির সদস্যদের কোনরূপ তোয়াক্কা না করে, ইচ্ছা স্বাধীনভাবে তার কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তদন্ত করে দেখা যায় যে বিসিআইসি ঢাকা’র জাতীয় টেন্ডার নং-১/৩৪১৪/২০২২-২০২৫ (তারিখঃ ০২/০৩/২০২২) মোংলা বন্দরে সার খালাসের লক্ষ্যে ৩৫ জন্য সিএন্ডএফ এজেন্ট নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। উক্ত ৩৫ জন সিএন্ডএফ এর কাছ থেকে ৬৮ লক্ষ টাকা বিসিআইসি কর্তৃপক্ষকে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেন লিয়াকত। 
লিয়াকতের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, মোংলা বন্দর বাগেরহাট জেলার মধ্যে হওয়ায় এই লিয়াকত হোসেন লিটন কাস্টমস কর্মকর্তা কর্মচারী, সিএন্ডএফ কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অবৈধ অস্ত্রের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জীবননাশের হুমকি দেখিয়ে সকলকে ভীত সন্ত্রস্থ করে রাখতেন। যেন কেউ তার অবৈধ কার্যক্রম ও দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে না পারে। এই মোংলা বন্দর ব্যবহার করে লিয়াকত অবৈধভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যান এবং মোংলা বন্দর তার বাবার বলে ঘোষণা করেন। বাগেরহাট জেলার আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি ও সর্বোপরি শেখ পরিবারের মদদপুষ্ট হওয়ায় মোংলা বন্দরের সমস্ত অপকর্মের দুঃসাহস দেখিয়ে এই সমস্ত অপকর্ম সাধন করেছেন। যা মোংলা বন্দরের ইতিহাসে ইতোপূর্বে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সিএন্ডএফ সদস্যরা। তাই এসব অভিযোগের তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মোংলা বন্দর সংশ্লিষ্ট সকলেই।