খুলনা | মঙ্গলবার | ১২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৮ কার্তিক ১৪৩১

থানায় ঝুলিয়ে নির্যাতন : ১২ বছর পর আদালতে মামলা

সাবেক পুলিশ কমিশনার শফিক, ওসি কামরুজ্জামানসহ আসামি ৯

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০৫:৪১ পি.এম | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪


থানায় ছাত্রদল নেতাকে ঝুলিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি এস এম কামরুজ্জামানসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার নির্যাতিত সাবেক ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হক টিটো বাদী খুলনা মহানগর হাকিমের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন তৎকালীন খুলনা সদর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মোঃ শাহ আলম, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ জেলহাজ্ব উদ্দিন, কনস্টেবল কাশেম, জাহিদ, তারক, ইস্রাফিল, তৎকালীন পুলিশ কমিশনার শফিকুর রহমান ও তৎকালীন ডেপুটি পুলিশ কমিশনারসহ অজ্ঞাত আরো অনেকে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল আনুমানিক সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার দিকে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার শফিকুর রহমান ও ডেপুটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে ওসি এস এম কামরুজ্জামানসহ আসামিরা মাথায় হেলমেট, হাতে লাঠি ও সরকারি অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মাহমুদুল হক টিটো ও ফেরদৌস রহমান মুন্নাকে জোরপূর্বক আটক করে। তাদের হ্যাণ্ডকাপ পরিয়ে ও চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে মাহমুদুলকে হ্যাণ্ডকাপ পরা অবস্থায় থানা অভ্যন্তরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। পুলিশের বেধড়ক মারধরে বাদী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। কামরুজ্জামান তখন পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘শালার জ্ঞান ফেরা, আমাদের আরো কাজ বাকি আসে।’ তখন আসামি এস আই মোঃ জেলহাজ্ব উদ্দিন চোখে মুখে পানি দিয়ে তার জ্ঞান ফেরান।
তিনি কোনো ভাবেই বসতে পারছিলেন না। আসামিরা তাকে বার বার লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এক পর্যায়ে তৎকালীন ওসি বাদীর পেটে লাথি মেরে মেঝেতে ফেলে দেয়। বলে‘ শালাকে ক্রসফায়ারের জন্য গাড়িতে উঠা, সব জানতে পারবো। তখন বাদী মেঝেতে পড়িয়া থাকলে পুনরায় আসামিরা পিটাতে থাকে। এতে তার হাড় ভেঙে যায় ও জখম হয়ে জ্ঞান হারান। পুলিশ কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশে পরে তাদের জেলহাজতে রাখা হয়। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালের ২২ এপ্রিল পুলিশ মিথ্যা মামলা দায়ের করে। যার প্রধান আসামি বাদী ও ফেরদৌস রহমান মুন্না।
এ ঘটনায় সে সময় খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামানসহ সিপাহী আবু সুফিয়ান, সিপাহী মামুন আখতার এবং ওসির গাড়িচালক সুধাংশুকে প্রত্যাহার করা হয়।
গ্রেফতার ছাত্রদল নেতা মাহমুদুল হক টিটো আরও বলেন, ‘ওসি কামরুজ্জামান আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে আমাকে থানার দোতলায় নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে ফ্যানের হুকে ঝুলিয়ে  মার শুরু করে।  লাঠি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। কয়েকবার মারার পর আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ি। সেন্স ফেরার পর আমি পানি খেতে চাই, কিন্তু তারা বলে ওকে পানি খেতে দেওয়া যাবে ন। এর পর  একজন আমাকে পানি দেয়, কিন্তু সেটা ছিল গরম পানি। আমি তখন বলি ভাই, গরম পানি কেন? তখন তারা বলে, তোকে এটা দিছি এটাই তোর জন্য অনেক কিছু। ’   
অসুস্থ অবস্থায় জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে বের হলেও আবার তাকে মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়। থানায় ডেকে এনে ভয়ভীতি দেখানো হয় তার পরিবারকে।  
টিটো বলেন, ‘ওই ঘটনার পর আমার পরিবার অনেক ভেঙে পড়ে। পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে রাজনীতি করতে নিষেধ করা হয়। পুলিশ পরিবারকে হুমকি দিয়ে বলে, আমি রাজনীতি করলে পরিবারের অনেক সমস্যা হবে। ’ 
মামলার বাদী বলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় জেল হাজতে থাকার পর সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও তিনি আসামিদের রোষানল হতে মুক্তি পাননি। পরবর্তীতে বিভিন্ন দলীয় মামলায় তাকে আসামি করা হয়। এতে তাকে কারাভোগ করতে হয়। ওই নির্যাতনে তার মেরুদণ্ডে সমস্যা ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে একাধিক বার থানা ও পুলিশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও মামলা গ্রহণ করা হয়নি। পুলিশের নির্যাতন ও মিথ্যা মামলায় তার ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে গেছে বলেও জানান এই ছাত্রদল নেতা।