খুলনা | বৃহস্পতিবার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় সহায়তায় প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র

শেখ হাসিনার সময়ে দুর্নীতির সাগরে ছিলাম : ড. ইউনূস

খবর প্রতিবেদন |
০১:২৮ এ.এম | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪


শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত ছিল বলে জানিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসব অর্থ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান ইউনূস। রোববার সকালে ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনা সরকারের সময় থেকে চলে আসা দুর্নীতি মোকাবিলায় সরকার এখন কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা মার্কিন প্রতিনিধি দলকে জানান। তিনি বলেন, ‘হাসিনার সময়ে বাংলাদেশ দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত ছিল।’ এ সময় জাতির পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চান তিনি।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের চ্যালেঞ্জগুলোর বর্ণনা দিয়ে ড. ইউনূস জানান, তার প্রশাসন অর্থনীতি পুনঃস্থাপন ও সংস্কার কাজ নিয়ে দ্রুত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। আর্থিক খাতে সংস্কার শুরু হয়েছে, বিচার বিভাগ ও পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কাজও শুরু হয়েছে।
মার্কিন প্রতিনিধি দলকে তিনি জানান, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর বাংলাদেশে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এ সময়টুকু বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে কাজে লাগাতে চান তিনি।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের একটি রূপরেখা বর্ণনা করে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভোট কারচুপি রোধ, বিচার বিভাগ, পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসন, দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা এবং সংবিধান সংশোধনের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে তারা কাজ শুরু করবে।
মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের সহকারী সচিব ব্রেন্ট নিম্যানের নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দল অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে। তার নেওয়া সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন করে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, তারা অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী।এ সময় আর্থিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম সমস্যা, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার নিউইয়র্ক সফর নিয়েও আলোচনা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক এ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, এ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি ব্রেন্ডন লিঞ্চ, সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি অঞ্জলি কৌর, উপ-সহকারী প্রশাসক এবং মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের পরিচালক জেরোড ম্যাসন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, সিনিয়র সচিব ও এসডিজি বিষয়ক প্রধান লামিয়া মোর্শেদ, পররাষ্ট্র সচিব মোঃ জসিম উদ্দিন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোঃ শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ইউনূসের সঙ্গে ঢাকায় সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদের বৈঠকের পর দেশটির দূতাবাসের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে পাঠানো বার্তায় বলা হয়েছে বাংলাদেশ যে ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ দেওয়া হয়।
ওই পোস্টে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতকালে বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রতিষ্ঠান গঠন ও উন্নয়ন সহযোগিতার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন আমাদের প্রতিনিধিদল। যেহেতু বাংলাদেশ আরও ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছে, যুক্তরাষ্ট্র সেই প্রচেষ্টায় সহায়তা করতে প্রস্তুত।
বৈঠকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।
এর আগে, শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি ঢাকায় আসেন। 
এতে আরও রয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক এ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ, ইউএসএআইডি এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের প্রতিনিধি।
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত ৮ আগস্ট ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো কোনো মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশ সফর করছে।