খুলনা | শুক্রবার | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগ : এজাহারে ১১ ইসি, কমিশনের দুই সচিব

রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় আসামি কাজী রকিব নূরুল হুদা, কাজী হাবিবুল

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩৭ এ.এম | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪


অবৈধ ও প্রতারণামূলক নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছে।
মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে ২০১৪ সালে নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রাকিব উদ্দিন আহমেদকে। এরপর পর্যায়ক্রমে আসামি করা হয়েছে ওই নির্বাচন কমিশনে দায়িত্বে থাকা চার নির্বাচন কমিশনার ছাড়া ২০১৮ সালে ও ২০২৪ সালে দায়িত্বে থাকা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুুরুল হুদা এবং কাজী হাবিবুল আইয়ালসহ কমিশনের সচিব ও অন্য সদস্যদের।
মামলায় আরও আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ তিন সংসদে থাকা সংসদ সদস্যদের।
বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-৬ কাজী শরিফুল হকের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন চট্টগ্রামে বিএনপি’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
একরামুল করিমের আইনজীবী কফিল উদ্দিন বলেন, ২০১৪, ‘১৮ ও ‘২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে বিরোধীদলসহ অনেক জনপ্রিয় নেতার অংশগ্রহণ ছিল না। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। যারা কমিশনে ছিলেন তাদের ব্যর্থতার কারণে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও নির্বাচনী মাঠে একপেশে আচরণ করেছে। বিপুল টাকা ব্যয়ে যে তিনটি নির্বাচন হয়েছে তাতে সংবিধানের খেলাপ করেছেন কমিশনারসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা, যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, এসব কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। আর ওইসব ভোটে নির্বাচিত হয়ে অবৈধভাবে সুযোগ সুবিধা ভোগ করায় এমপিদেরও মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলায় ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, কে এম নূুরুল হুদা, কাজী হাবিবুল আওয়াল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ, মোঃ জাবেদ আলী, মোঃ আবদুল মোবারক, মোঃ শাহনেওয়াজ, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদাৎ হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মোঃ আহসান হাবিব খান, বেগম রাশেদা সুলতানা, মোঃ আলমগীর, মোঃ আনিসুর রহমান, নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
এ ছাড়া নির্বাচনের নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে আসামি করা হয়েছে।  
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের একপেশে, জনগণের অংশগ্রহণবিহীন ভুয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন এবং সংবিধান রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ ভঙ্গ করে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ভুয়া সংসদ সদস্য ঘোষণার ক্ষেত্রে আসামিদের সক্রিয় ভূমিকা ও অংশগ্রহণ ছিল। ভুয়া নির্বাচন আয়োজন ও অনির্বাচিত ব্যক্তিদের সংসদ সদস্য (এমপি) ঘোষণার কারণে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন, জাতীয় সংসদসহ সব সাংবিধানিক কাঠামোর প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও প্রত্যয় নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সংসদ সদস্যদের ব্যঙ্গ করে ক্ষুব্ধ জনগণ ২০১৪ সালের সংসদ সদস্যদের ‘বিকাশ এমপি’, ২০১৮ সালের সংসদ সদস্যদের ‘নিশীরাতের এমপি’ এবং ২০২৪ সালের সংসদ সদস্যদের ‘আমি-ডামির এমপি’ বলে হেয় করতো।
এতে আরও বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও ইন্ধনে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে জনগণের সব গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, দেশের সংবিধান ও আইনকে লঙ্ঘন করে একপেশে, জনগণের অংশগ্রহণ বিহীন ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু অনির্বাচিত লোককে সংসদ সদস্য ঘোষণা করেন। পরে তাদের মন্ত্রী ও স্পিকার ঘোষণা করা হয়। দেশের মানুষ ভোট দিতে না পারায় নির্বাচন বিমুখ হয়ে পড়ে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে গণতন্ত্র। দেশে স্বৈরচারী লুটেরা ব্যবস্থার আর্বিভাব হয়। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা দেশের সব সম্পদ বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু করে দেন।