খুলনা | শুক্রবার | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১২ আশ্বিন ১৪৩১

গণমামলায় গ্রেফতার আতঙ্ক : পুলিশের এজাহার হোক তদন্ত নির্ভর

|
১২:৪৮ এ.এম | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪


বিগত সরকার পতনের পর সারা দেশে গণহারে মামলা দায়েরের ফলে অনেক নিরপরাধ মানুষের মনেও গ্রেফতার আতঙ্ক পেয়ে বসেছে। যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোঃ মাইনুল হাসান স¤প্রতি বলেছেন, থানায় মামলা রেকর্ড হলেই এজাহারনামীয় আসামি ধরতে হবে-এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, আসামি ধরা হবে তদন্তসাপেক্ষে। ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য যৌক্তিক, সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে এজাহারের মাধ্যমে থানায় মামলা করা হয়। কারণ রাষ্ট্রপক্ষের যে কোনো মামলার আইনি প্রক্রিয়ার শুরু হয় এই এজাহারের মাধ্যমে। অর্থাৎ যে কোনো মামলার প্রথম ধাপ হলো এই এজাহার। সেক্ষেত্রে এফআইআরে উলে­খিত ব্যক্তিকে গ্রেফতারে তদন্তকার্যের মতো আইনি কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কাজেই আমরাও মনে করি, জনমনে গ্রেফতার আতঙ্ক কাটাতে হলে পুলিশকে তদন্তের দিকেই মনোনিবেশ করতে হবে।
উলে­খ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষার্থীসহ প্রায় সহস্র মানুষ নিহত হয়েছেন। এসব হত্যার ঘটনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মামলা করা হচ্ছে। এসব মামলার এজাহারের বর্ণনা অনেকটা একই রকম, প্রধান আসামিদের নামও প্রায় একই। অনেক মামলায় শতাধিক আসামির নামোলে­খ করে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হচ্ছে। আইনজীবীরা বলছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩০২ ধারার মামলায় এজাহারের বর্ণনা সুস্পষ্ট হতে হয়; কিন্তু আন্দোলন ঘিরে হত্যাকান্ডের ঘটনায় যেসব মামলা হচ্ছে, সেগুলোর এজাহারে অস্পষ্টতা রয়েছে, যা মামলার দুর্বলতা। আবার আসামির সংখ্যাও অনেক। অজ্ঞাতনামা কয়েকশ’ আসামি থাকায় সুযোগসন্ধানীদের জন্য বাণিজ্য করার পথও তৈরি হয়েছে। আবার এসব মামলায় হুকুমের আসামি অনেক; কিন্তু সরাসরি সম্পৃক্ত আসামি কম। ফলে এসব ক্ষেত্রে আদালতে অভিযোগ প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। কাজেই প্রকৃত বিচার পেতে হলে এ ধরণের দুর্বল মামলা দায়েরের প্রবণতা কমাতে হবে। বরং বিগত সরকারের সময় অপকর্মে লিপ্ত ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের ও গ্রেফতার করা হলে বিচার প্রক্রিয়া যেমন স্বচ্ছতা পাবে, তেমনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের সম্ভাবনাও জোরালো হবে। 
শুধু বিগত সরকারের সময়েই নয়, অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে এখনো যারা জড়িত রয়েছেন, তদন্তের মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া হাতে নিতে হবে। অন্যথায় ‘নিছক হয়রানিমূলক’ আখ্যায় এসব মামলা যেমন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তেমনি অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিও দুর্ভোগের শিকার হতে পারেন। জনমনে আস্থা অর্জনের স্বার্থে গ্রেফতারের পূর্ব প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ আরও বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে, এটাই প্রত্যাশা।