খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

নারীর অভিমান : অনুভূতির নীরব ভাষা

জয়া মেহেবুব |
০১:২৭ এ.এম | ০৫ অক্টোবর ২০২৪


নারী এবং তার অভিমান, এই দু’টি ধারণা যেন পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারী মনের অভিমান এক ধরণের আবেগঘন প্রতিক্রিয়া, যা প্রকাশ পায় নীরবে, স্পষ্ট না হলেও গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়। এটি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও আত্মসম্মানের এক সূ² প্রকাশ। সম্পর্কের মধ্যে যখন তার অনুভূতি বা ভালোবাসা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় না, তখনই অভিমান তার মনোজগতের দরজা খুলে দেয়।
মনের গভীর আবেগ : নারীর অভিমান মূলত তার গভীর আবেগেরই প্রতিফলন। প্রিয়জনের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ভালোবাসা, যতœ বা সমর্থন না পেলে সে অভিমানের আশ্রয় নেয়। এটি সরাসরি ক্ষোভ বা রাগের মতো নয়, বরং এক ধরণের অভ্যন্তরীণ বেদনা যা সে নীরবে অনুভব করে। অভিমান প্রকাশের মাধ্যম হতে পারে নীরবতা, দূরত্ব তৈরি করা, বা কোনো বিষয়ে হালকা মনোঃকষ্ট প্রকাশ করা। এটি মূলত এক ধরণের মানসিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে নারী তার নিজের অনুভূতির গুরুত্ব বোঝাতে চায়।
সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে অভিমান: প্রেমের সম্পর্ক, পারিবারিক সম্পর্ক বা বন্ধুত্বসব ক্ষেত্রেই নারীর অভিমান একটি স্বাভাবিক ও মানবিক প্রতিক্রিয়া। অনেক সময় একজন নারী তার প্রিয়জনের কাছ থেকে যে পরিমাণ যতœ বা মনোযোগ আশা করে, তা না পেলে সে নীরবে অভিমান করে। এই অভিমান কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করে বরং সম্পর্ককে আরো গভীরভাবে বোঝার জন্য একটি সুযোগ করে দেয়। প্রিয়জন যখন নারীর অভিমানকে গুরুত্ব দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে, তখন সম্পর্কের ভিত আরো দৃঢ় হয়।
অভিমানের ইতিবাচক দিক : অনেকেই মনে করেন যে, অভিমান সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর। তবে অভিমান কখনো কখনো সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করে এবং সম্পর্কের গভীরতাকে বাড়ায়। অভিমান প্রকাশের মাধ্যমে নারী আসলে সম্পর্কের ভেতরকার কোনো অমিল বা অসম্পূর্ণতাকে সামনে নিয়ে আসে। এই অভিমান যদি সঠিকভাবে সমাধান করা হয়, তবে তা সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করতে পারে।
অভিমান ভাঙানোর উপায় : নারীর অভিমান ভাঙানোর জন্য প্রয়োজন মনোযোগ ও যতœ। যখন সে অনুভব করে তার কথা, অনুভূতি এবং অবস্থানকে সম্মান করা হচ্ছে, তখনই তার অভিমান কমে যায়। এক্ষেত্রে সরাসরি আন্তরিক আলাপচারিতা, সঠিক বোঝাপড়া এবং ভালোবাসার প্রকাশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিমানকে অবহেলা না করে, বরং তাকে গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিলে সম্পর্ক আরো মজবুত হয়।
সম্মানের প্রতিচ্ছবি : নারীর অভিমান অনেক সময় তার সম্মানের প্রতিফলন। এটি তার আত্মমর্যাদার একটি প্রকাশ। যখন সে অনুভব করে যে তার সম্মান বা মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে, তখন অভিমান তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা দেয়। তাই, নারীর অভিমানকে উপেক্ষা না করে, বরং তার মনের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করা উচিত। এর মাধ্যমে সম্পর্ককে নতুন মাত্রায় উন্নীত করা সম্ভব।
নারীর অভিমান তার মনের গভীর আবেগ এবং ভালোবাসার প্রতিফলন। এটি কোনো দুর্বলতা নয়, বরং সম্পর্কের প্রতি তার যতœশীল মনোভাবের প্রকাশ। সম্পর্কের মধ্যে যখন পারস্পরিক সম্মান, বোঝাপড়া এবং ভালোবাসা বজায় থাকে, তখন অভিমান মুছে যায় এবং সম্পর্ক হয়ে ওঠে আরও শক্তিশালী। নারীর অভিমানকে বোঝা ও সম্মান করা একটি সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি।