খুলনা | শনিবার | ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

বাংলাদেশিদের ওপর মিয়ানমারের গুলি, কারণ জানাল কোস্টগার্ড

জেলে হত্যায় গভীর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ ঢাকার

খবর প্রতিবেদন |
০১:৩১ এ.এম | ১২ অক্টোবর ২০২৪


টেকনাফ উপজেলার কোনা পাড়া, শাহ পরী দ্বীপে ওসমান (৬০) নামে একজন বাংলাদেশি জেলেকে হত্যার ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমার সরকারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বুধবার কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা অবস্থায় ছয়টি ট্রলারসহ ৫৮ জেলের ওপর গুলি চালায় মিয়ানমার নৌ-বাহিনী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকায় মিয়ানমার দূতাবাসে পাঠানো এক কূটনৈতিক নোটে বলা হয়েছে, ‘এই মর্মান্তিক ঘটনায় বাংলাদেশ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।’
এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারকে বাংলাদেশের ভূখন্ডের জলসীমার অখন্ডতাকে সম্পূর্ণভাবে সম্মান করতে এবং আর কোনো উস্কানি থেকে বিরত থাকতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নোটটিতে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন দ্বীপের কাছে মাছ ধরার সময় ওসমানের মালিকানাধীন একটিসহ ৫৮ বাংলাদেশি জেলে ও ছয়টি মাছ ধরার নৌকা অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও মিয়ানমার নৌবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের পর অবশেষে বৃহস্পতিবার দুই দফায় নৌকাসহ জেলেদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ঢাকা এই ধরনের অযৌক্তিক কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মিয়ানমারকে আহŸান জানিয়েছে।
এছাড়া মিয়ানমারকে বাংলাদেশের জলসীমার অখন্ডতার প্রতি পূর্ণ সম্মান জানানো এবং ভবিষ্যতে আর কোনো উস্কানিমূলক কর্মকান্ড থেকে থেকে বিরত থাকার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে ঢাকা।
কারণ জানাল কোস্টগার্ড : কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা অবস্থায় ছয়টি ট্রলারসহ ৫৮ জেলে ভুলবশতঃ মিয়ানমার জলসীমায় ঢুকে পড়েছিল; এ নিয়ে মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিডবোট থেকে ট্রলারগুলো লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার দুপুরে কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোঃ জহিরুল হক। তিনি বলেন, গত ৬ অক্টোবর টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জেটি ঘাট থেকে ছয়টি ট্রলারে ৫৮ জেলে সাগরে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। গত ৯ অক্টোবর সেন্টমার্টিন থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা অবস্থায় ভুলবশতঃ তারা মিয়ানমারের জলসীমায় প্রবেশ করে। এ সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত একটি স্পিডবোট থেকে ট্রলারগুলো লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। এতে তিন জেলে গুলিবিদ্ধ হন। পরে এদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান।
ক্যাপ্টেন জহিরুল হক বলেন, মিয়ানমার নৌবাহিনী অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ট্রলারসহ জেলেদের আটক করে নিয়ে যায়। পরে বঙ্গোপসাগরে টহলরত কোস্টগার্ডের জাহাজ বিসিজিএস তাজউদ্দীন বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর মিয়ানমার নৌবাহিনীর টহলরত জাহাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বৃহস্পতিবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে জেলেসহ ট্রলার তাজউদ্দীনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি জানান, সীমান্তের কাছাকাছি এই ধরণের গুলিবর্ষণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। শিগগিরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মিয়ানমারে প্রতিবাদ লিপি দেওয়া হবে।
এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দুপুরে মৃতসহ ১১ জেলে বহনকারি ট্রলারটি কোস্টগার্ডের সহায়তায় শাহপরী দ্বীপ জেটি ঘাটে এসে পৌঁছায়। পরে বিকাল সাড়ে ৫টায় অপর ৫টি ট্রলার ৪৭ জেলেসহ বিসিজিএস তাজউদ্দীনের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এসব জেলেকে প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবার সরববারহ করা হয় এবং কোস্টগার্ড আউটপোস্ট শাহপরী কর্তৃক সবাইকে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।