খুলনা | রবিবার | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ৭ পৌষ ১৪৩১

ইঞ্জিনিয়ার থেকে সফল কৃষক মোল্লাহাটের ফয়সাল

বিনিয়োগ মাত্র ৫০ হাজার : পলিনেট হাউজে চারা উৎপাদন করে এক বছরেই লাভ ৮ লক্ষাধিক টাকা

সাইফুল ইসলাম বাবলু |
০১:২৫ এ.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২৪


পেশার মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছেন ১০ বছর। তবে চাকুরিতে তার পোষায়নি। অবশেষে আসেন মাটির টানে নিজ বাড়ি মোল­াহাটে। পিতার পৈতৃক পেশার হাল ধরেন। নিজ বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন কৃষি খামার। এরপর তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। পৈতৃক জমিতে গড়ে তোলেন অফসিজন সবজি চারা উৎপাদন খামার। যা থেকে আজ সে স্বাবলম্বী। কৃষি  অধিদপ্তরের সহায়তায় পলিনেট হাউজে চারা উৎপাদন করে গত বছরই লাভ করেছেন ৮ লক্ষাধিক টাকা। এ বছর লাভের অংক দ্বিগুণে দাঁড়াবে বলে আশাবাদী এই উদ্যোক্তা। এছাড়া তিনি তার খামারে  ১০-১৫ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছেন। খামারে নিয়মিত কাজ করছেন আটজন শ্রমিক। এছাড়া অনিয়মিত আরো ৭  থেকে ১০ জন শ্রমিক রয়েছে।
কৃষি উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ফয়সালের পৈতৃক নিবাস মোল­াহাট উপজেলার গাফড়া গ্রামে। বাবা পেশায় ছিলেন কৃষক। কৃষি থেকেই ফয়সাল ও তার দুই ভাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ও স্বাবলম্বী করেছে তার বাবা।  মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা করে ফয়সাল ঢাকার বসুন্ধরা গ্র“পে চাকুরি নেন। সেখানে চাকুরিও করেছেন প্রায় ১০ বছর। ভালো বেতনে চাকুরি করলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিধায় ভবিষ্যতের জন্য তেমন কোন সঞ্চয় করতে পারেননি। তাইতো ২০১৯ সালে শেষ মাসের বেতন ৫০ হাজার টাকা নিয়ে চাকুরি ছেড়ে চলে আসেন বাড়িতে।
কৃষি পেশা মানুষের ভাগ্য বদলে দিতে পারে এমন ভাবনা থেকে সে বছরই মাত্র ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ৩৫ শতাংশ পৈতৃক জমিতে শুরু করেন কৃষি কাজ। নিজ ধারনা থেকে শুরু করেন সবজি চারা উৎপাদন। এখানে বেশ লাভের পাশাপাশি এলাকায় ব্যপক চাহিদা থাকায় শুরু করেন অফসিজন সবজির চারা উৎপাদন। তার এমন উদ্যোগে সহায়তায় এগিয়ে আসে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। কৃষি অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতায় ২০২৩ সালে গড়ে তোলেন মধুমতি এগ্রো এন্ড নার্সারী। শুরু করেন পলিনেট হাউজে সবজি চারা উৎপাদন। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। গত বছর তার খামারে উৎপাদিত হয় ১২ লক্ষাধিক চারা। খরচ খরচা বাদ দিয়ে যার থেকে আয় হয় ৮ লক্ষাধিক টাকা। আর চলতি বছর তার টার্গেট ২৫ থেকে ৩০ লাখ চারা উৎপাদন। যার প্রাথমিক পর্যায় ইতোমধ্যে সম্পন্নও করেছেন। গত বারের তুলনায় এবার দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন এ উদ্যোক্তা।   
সরেজমিন এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় সফল কৃষি উদ্যোক্তা ফয়সালের। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি কৃষিতে দ্রুত সফলতা আসে। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বক্ষণিক সহায়তায় আজ আমি সফল উদ্যোক্তা। এখানে উৎপাদিত চারার মান ও জাতের নিশ্চয়তা পাওয়ায় কৃষকদের কাছে ইতোমধ্যে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। আমার খামারে উৎপাদিত চারা স্থানীয় চাহিদা পূরণের পর পার্শ্ববর্তী জেলা গোপালগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকেরা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন যেহেতু বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। কৃষিতে ভাগ্য উন্নয়নের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। সারা বাংলাদেশে কৃষি অফিস কাজ করছে। সাথে আমরা যারা তরুণ উদ্যোক্তা আছি, আমরা একসাথে এগিয়ে এলে  কৃষি তে অভাবনীয় বিপ্লব ঘটাতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।
মোল­াহাট উপজেলা কৃষি অফিসার অনিমেষ বালা এ প্রতিবেদককে বলেন,  তরুণ উদ্যোক্তা মোহাম্মদ ফয়সাল আমাদের সহায়তায় পলিনেট পদ্ধতিতে সিজন/ অফসিজন উভয় প্রকার চারা উৎপাদন করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তাকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন সাধারণ বীজতলায় উৎপাদিত চারা উত্তোলনের সময় চারার শিকড় ছিড়ে যায়। এতে চারা রোপণের পর প্রায়  ১৫ দিন চারার স্ট্রেস থাকে। কিন্তু পলি নেট নার্সারীর উৎপাদিত চারা কোকো পিটের উপর উৎপাদন করায় চারার শিকড় ছেড়ে না। তাই চারা রোগ মুক্ত থাকে এবং দ্রুত বাড়ে ও ফুল ফল আসে। যে কারনে কৃষক পর্যায়ে এ চারার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তিনি প্রতি জেলা উপজেলায় পলিনেট পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনে তরুণ উদ্যোক্তার পাশাপাশি কৃষকদের এগিয়ে আসার আহŸান জানান।