খুলনা | মঙ্গলবার | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৬ পৌষ ১৪৩১

অতিবৃষ্টির জলাবদ্ধতায় আমনের ক্ষতি সাড়ে ৩ কোটি টাকা

শরণখোলায় পাউবো’র ৩১ স্লুইসগেট এখন কৃষকের গলার কাটা

শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি |
১১:২০ পি.এম | ১৩ অক্টোবর ২০২৪


শরণখোলায় পাউবো’র ৩১ স্লুইসগেট এখন কৃষকের গলার কাটা হিসেবে দেখা দিয়েছে। চলত মৌসুমে অতিবৃষ্টির জলাবদ্ধতায় রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, অতিবৃষ্টির জলাবদ্ধতায় দীর্ঘদিন পানিতে তলিয়ে থাকায় রোপণকৃত আমনের চারা পচে উপজেলার চারটি ইউনিয়নে সাড়ে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ১নম্বর ধানসাগর ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। 
স্থানীয়রা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ভেড়িবাঁধে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ৩১ টি স্লুইস গেটের গভীরতা কম এবং ফসলি জমির মধ্যে থেকে প্রবাহিত অসংখ্য খাল ভরাট হওয়ায় প্রতিবছরই এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এবছর অসময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি হয়েছে। জমিতে প্রায় একমাস ধরে পানি আটকে থাকায় হাজার হাজার বিঘার আমনের চারা পচে গেছে। 
সরেজমিন গিয়ে চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে কৃষি বিভাগের হিসাবের চেয়েও ক্ষতির পরিমাণও বেশি বলে দাবি করছেন। স্লুইসগেটগুলো থেকে ঠিকমতো পানি নামতে না পারায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের।
উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের হোগলপাতি গ্রামের চাষি মোঃ ছগির শরীফ জানান, তিনি এবছর ২৫ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। এক বিঘা জমি চাষাবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৯ হাজার টাকা। কিন্তু বৃষ্টির পানি আটকে তার ১৪ বিঘা জমির চারা পচে সব নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছর তিনি ২০ বিঘা জমিতে ফসল পেয়েছিলেন ৩০০ মণ। পানিতে নষ্ট হওয়ায় এবছর বেশি জমি চাষ করেও অর্ধেক ফসল ঘরে তুলতে পারবেন না বলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
একই গ্রামের চাষি কবির শরীফ জানান, তার ১৬ বিঘা জমি রোপণ করার পর পানিতে  ৯ বিঘার চারাই পচে গেছে। শাহজাহান শরীফ জানান, তার ১৪ বিঘার মধ্যে ১২ বিঘা জমির সমস্ত আমনের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া মেহেদী হাসানের ১০ বিঘার মধ্যে ৫ বিঘা, সুশান্ত হালদারের ১৪ বিঘার মধ্যে ৬ বিঘা, দুলাল হাওলাদারের ১৪ বিঘার মধ্যে ৪ বিঘা জমির চারা পচে গেছে। এভাবে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা জমির রোপা আমনে পচন ধরে ব্যাপক ফসলহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গতবছরের তুলনায় এবছর অর্ধেক ফসলও ঘরে উঠবেনা তাদের। মাঠের এমন অবস্থা দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। তারা স্লুইস গেট সংস্কার ও ভরাট খাল দ্রুত খননের দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শরণখোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৫/১ পোল্ডারের ৬২ কিলোমিরার ভেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ৩১টি ছোট-বড় স্লুইসগেট রয়েছে। এগুলোর বেশির ভাগই জমি থেকে এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ধানসাগর ইউনিয়নের আওতায় ১২টি গেটের ৫টির কপাট নষ্ট। এছাড়া ফসলের মাঠের মধ্যে থেকে প্রবাহিত খালের অধিকাংশরই অস্তিত্ব নেই। আর যেগুলো আছে তাও ভরাট হওয়ায় পর্যাপ্ত পানি নামতে পারে না। যে কারণে প্রতি বছরই জলাবদ্ধতায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আর এবছর অসময়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টিপাতের ফলে ক্ষতির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় বহুগুণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শরণখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, অতিবৃষ্টিতে এবছর আমনের সর্বনাশ হয়েছে। স্লুইস গেটগুলো সব খুলে দেওয়ার পরও তুলনামূলক নিচু জমির পানি নামছে না। গেটগুলোর গভীরতা কম এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আরো চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, অতিবৃষ্টির ফলে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের সবখানেই রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে ধানসাগর ইউনিয়নে ক্ষতির পরিমাণ বেশি। গতবছরের তুলনা এবার ফসল উৎপাদন কম হতে পারে। প্রাথমিকভাবে চারটি ইউনিয়নের তথ্য সংগ্রহ করে জলাবদ্ধতায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আমনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।