খুলনা | মঙ্গলবার | ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

খালিশপুরের বহুল আলোচিত জাহিদ হত্যায় ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ আসামি খালাস

নিজস্ব প্রতিবেদক |
০২:০৪ পি.এম | ২৮ অক্টোবর ২০২৪


নগরীর খালিশপুর এলাকার বহুল চাঞ্চল্যকর জাহিদ হত্যা মামলায় ৫ জনকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। গতকাল সোমবার খুলনার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ জুয়েল রানা এ রায় ঘোষণা করেন। 
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসাহলেন খালিশপুর বঙ্গবাসী মোড়স্থ এন/এইচ-২১ এর মৃত আব্দুল কাইয়ুম আনসারীর দুই  ছেলে মোঃ আব্বাস আনসারী (৪৩) ও মোঃ জব্বার (৪১), বঙ্গবাসী মোড়ের মৃত মাহবুব আলম ফরাজীর ছেলে মোঃ নশু ফরাজী (৩৮), ভাটিয়াপাড়া মিষ্টান্ন ভান্ডারের পিছনের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে  মোঃ রিয়াজ (৩১), বঙ্গবাসী মোড়ের মনোয়ারের ছেলে মোঃ নাদিম (৩৩)।
এছাড়া ওইসব আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার আরেক ভিকটিম নিহত জাহিদের বড় ভাই জাবেদকে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হত্যা চেষ্টা ও আহত করার অভিযোগে দণ্ডবিধি ৩২৪ ও ৩০৭ ধারায় তিন বছর ও ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে আলাদা ভাবে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। রায়ে সাজা কার্যকারের ব্যয় হিসেবে এক লাখ টাকা বাদে বাকি টাকা জাহিদের পরিবার মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ হিসাবে পাবে। আসামির পরিবার অর্থদণ্ডের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে আদায় করা হবে। এ মামলায় ৭ আসামিকে খালাস প্রদান করা হয়েছে তারা হলেন হাউজিং এস্ট্রেট এন/এইচ-৬২ এর সেলিম মওরফে সান্নানের ছেলে মোঃ ইব্রা আর আলাম আসিফ (৩২), বঙ্গবাসী মোড়ের মুন্নার ছেলে মোঃ রানা হোসেন (৩০), বঙ্গবাসী মোড়ের সোলেমানের ছেলে সুলতান ওরফে গব্বার (২৯), বঙ্গবাসী মোড়ের ইসমাইলের ছেলে পাতলা সাগর (২৮), টিএন্ডটি মোড়ের মৃত নাদিমের দু’ছেলে মোঃ ওমর ফারুক ওরফে আরিফ (৩৩) ও  মোঃ মেহেদী হাসান ওরফে প্যাকেট মেহেদী (৩৬) ও গোয়লখালি এলাকার মৃত মোস্তফা হোসেনের ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম জাহিদ (৩০)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেন খুলনার জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের উচ্চমান বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক শাহিন। 
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, খালিশপুর হাউজিং স্ট্রেট এলাকার বাসিন্দা সাব্বির হোসেনের বড় ছেলে জাবেদের এলাকার কতিপয় দু®কৃতির সাথে পূর্ববিরোধ ছিল। ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি বাসা থেকে চিত্রালী বাজারের উদ্দেশ্যে বের হন। পথিমধ্যে বঙ্গবাসী মোড় জনৈক জাহাঙ্গীরের চালের দোকানের সামনে পৌঁছালে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার ওপর আক্রমণ করে। এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। আক্রমণের ঘটনা জানতে পেরে জাবেদের দুইভাই মোঃ সুমন ও জাহিদ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় এ মামলার আসামি আব্বাস আনছারি ও জব্বার জাবেদের ছোটভাই মোঃ সুমনকে জাপটে রাখে এবং সন্ত্রাসীরা তার মেজভাই জাহিদকে এলোপাতাড়িভাবে কোপাতে থাকে। পরবর্তীতে জাহিদ চিৎকার করতে থাকলে ঘটনাস্থলে এলাকাবাসী চলে আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরেরদিন নিহতের ছোট ভাই মোঃ সুমন ১২ জনের নাম উলে­খসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনের নাম উলে­খ করে খালিশপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক মোঃ বাবলুর রহমান খান ১২ জন আসামির নাম উলে­খ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলা চলাকালীন সময়ে ২৬ জনের মধ্যে ১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এ ঘটনার প্রায় ৭ বছর ১০ মাস পর গতকাল রায় ঘোষণা করা হয়েছে। পরে পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বাদীপক্ষ নিহতের পরিবার-পরিজন।