খুলনা | বৃহস্পতিবার | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল হওয়ার পথে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

|
১২:১১ এ.এম | ০১ নভেম্বর ২০২৪


এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশ যা আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সর্বনি¤œ সূচক প্রদর্শন করে। এলডিসি সূচক কেুীবদ্ধ হয় তিনটি মানদন্ডে। প্রথমত, দরিদ্রতা, ২য়, মানর সম্পদের দুর্বলতা যা পুষ্টি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সূচকের ভিত্তিতে বিবেচিত হয়, ৩য় অর্থনৈতিক দুর্বলতা যার ভিত্তি হচ্ছে কৃষি উৎপাদনের ও রফতানির অস্থিতিশীলতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত জন সংখ্যার শতাংশ। এই মানদন্ডে ২০২৩ সালের হিসেবে বিশ্বের ৪৫টি দেশ এলডিসিভূক্ত দেশ। ৭টি দেশ এর মধ্যে উন্নত হয়েছে যে দেশগুলোর অগ্রযাত্রা উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উন্নীত হওয়া। বাংলাদেশসহ আরও ৬টি দেশ এই অগ্রযাত্রার পাইপ লাইনে রয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালে জাতিসংঘের এলডিসি তালিকাভূক্ত হয়। ২০১৫ সালে  পৌঁছে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে। ২০১৮ সালে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ২০তম অধিবেশনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের মানকাঠির ৩টিতেই উত্তীর্ণ হয়। বর্তমান দেশের অর্থনীতি, জাতীয় উৎপাদন ও জনজীবনের গতি প্রকৃতি অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালের নভেম্বরে এলডিসি তালিক থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের গোত্রে ঢুকে পড়বে।
বাংলাদেশের এই মর্যাদার অধিভুক্তি হওয়ার পথে চ্যালেঞ্চ ও সম্ভাবনা দুটোই আছে। সম্ভাবনার বিষয়টি হলো দেশের আত্মমর্যাদা বাড়বে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অবস্থা হবে শক্তিশালী। আন্তর্জাতিক প্রাংগণে দেশের মান বাড়বে। সূচকে উন্নয়ন হওয়ার  স্বীকৃতির ফলে প্রমাণিত হবে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকিমুক্ত হয়েছে। এই কম ঝুঁকির লাভ হচ্ছে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ লাভ। বিদেশী বিনিয়োগের ফলে দেশে ব্যাপক শিল্পায়ন হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সিডিপি’র মতে চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, বিদেশী সহযোগতার হাল চিত্র। প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী দেশের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। এডিবি পূর্বাভাস মতে চলতি অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.১ শতাংশ। দেশীয় মুদ্রার মান ৪০ শতাংশ কমেছে। রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে গেছে। মূল্যস্ফিতি ১০ শতাংশে। অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পথে, পুঁজি বাজারও ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে।
উন্নয়নশীল দেশের সারিতে বসলে খ্যাতির বিড়ম্বনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এ সময় দেশ সহজ শর্তে ঋণ ও রফতানিতে বিভিন্ন সুবিধা হারাবে। বৈদেশিক অনুদান ও কম সুদের ঋণ কমে আসবে। বৈদেশিক ঋণের ব্যয় বেড়ে যাবে। সব চেয়ে বড় ধাক্কা আসবে রফতানি খাত। বর্তমান এলডিসিভূক্ত হওয়ায় শুল্কমূক্ত যে বাণিজ্য সুবিধা পাচ্ছে ২০২৬ সালে এ ধরণের সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় দেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সুযোগ কষ্টের কারণ হবে কিনা ভেবে দেখা দরকার। বাংলাদেশের এ উত্তরণে সুযোগ অনেক ভুল থাকার বিষয়ও বিভিন্ন প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে জিডিপি, রিজার্ভ, মাথাপিছু আয় হিসেবে রয়েছে ভুল তথ্য। ১১ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের হিসেবেও রয়েছে গড়মিল। তবে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছতে যে ২ বছর সময় আছে এ সময়ের ভেতর অর্থনৈতিক ঘাটটিগুলো মেরামত ও এলডিসি’র সুবিধাগুলো অব্যহত রাখতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস  ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।